পাকিস্তানে একটি নিষ্পত্তিহীন নির্বাচনের পরে জোট সরকার গঠনের বিষয়ে মতপার্থক্য দূর করতে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বৈঠকে বসতে চলেছে দেশটির প্রধান দুটি দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।
বিশ্লেষকরা এনডিটিভিকে বলছেন, ২৪১ মিলিয়ন জনসংখ্যার পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটি মন্থর প্রবৃদ্ধি এবং রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে ক্রমবর্ধমান মৌলবাদী সহিংসতার মধ্যে অর্থনৈতিক সংকটে পতিত হয়েছে। যে কারণে দেশটিতে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি স্থিতিশীল সরকার প্রয়োজন।
ওই বৈঠক প্রসঙ্গে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সিনেটর ইসহাক দার রবিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘উভয় দল এখনও মূল বিষয়ে একমত হতে পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে।’
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পার্টি পিএমএল-এনকে শর্তসাপেক্ষে সমর্থন ঘোষণা করে বলেছে, তারা শরীফকে সরকার গঠনের জন্য ভোট দেবে, কিন্তু মন্ত্রিসভায় থাকবে না।
ইসহাক দার পাকিস্তানের জিও টিভিকে বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত করতে পারি, নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, রাজনৈতিক দল দুটি একটি জোট সরকার গঠন করবে।’
উল্লেখ্য, পিএমএল-এন প্রধান নওয়াজ শরীফ পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে জোটের প্রার্থী হিসাবে তার ভাই ৭২ বছর বয়সি শেহবাজ শরীফের নাম প্রস্তাব করেছেন, যিনি ১৬ মাস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
এদিকে, পাকিস্তানের সদ্য সমাপ্ত ১৬তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপির দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করা রাওয়ালপিন্ডি ডিভিশনের কমিশনার লিয়াকত আলী চাত্তাকে আটক করেছে পুলিশ।
রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের পর পুলিশের কাছে গিয়ে নিজেই আত্মসমর্পণ করেন চাত্তা। পরে তার অফিসে অভিযান চালিয়ে সেটি বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
রাওয়ালপিন্ডি জেলা প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সামগ্রী ও তথ্য-উপাত্ত সুরক্ষিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, স্থানীয় এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রশাসন রেকর্ড জালিয়াতি ঠেকাতে অফিসটি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
তবে পুলিশের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ওই কমিশনারকে গ্রেফতার করা হয়নি। তাকে আটক করে অজানা স্থানে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
পাকিস্তানে সিইসি ও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবি পিটিআইয়ের
কারচুপিতে তার ভূমিকা স্বীকার করে রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলী চাত্তা বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ৭০ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকা প্রার্থীদের ফলাফল পরিবর্তন করে তাদের পরাজিত ঘোষণা করা হয়।
নির্বাচনী কারচুপিতে জড়িত থাকার জন্য কমিশনার নিজেকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আজ সকালের নামাজের পর আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছি।’
রাওয়ালপিন্ডি থেকে ১৩ জন প্রার্থীর ফলাফলে কারচুপি এবং তাদের বিজয়ী ঘোষণা করে ভোটে এগিয়ে থাকা প্রার্থীদের পরাজিত ঘোষণা করা হয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দেন চাত্তা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেনি। এবারের নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)–সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৯২টি আসন পেয়েছে। এরপর রয়েছে যথাক্রমে পিএমএল-এন ৭৯ ও পিপিপি ৫৪ আসন। কোনো দল বা জোট সরকার গঠন করতে হলে ১৩৪টি আসন প্রয়োজন।
রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলির করা ভোট কারচুপির অভিযোগ তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি করেছে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন। সংস্থাটি জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে রাওয়ালপিন্ডির কমিশনারের বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।