জন্মহার কমায় নতুন রেকর্ড গড়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এনিয়ে ৪ বছর টানা জন্মহার কমেছে। তাই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে দেশটির জনসংখ্যা কমা নিয়ে।
দেশটির নারীরা কর্মজীবনের অগ্রগতি এবং সন্তান লালন-পালনে আর্থিক ব্যয় বহনের ভয়ে জন্মহারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশু জন্মহার হ্রাস মানে দেশে শ্রমশক্তির হ্রাস এবং বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া। যে কোনো দেশের অর্থনীতিতেই জনসংখ্যার এই পরিসংখ্যান নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দেশে জন্মহার বাড়াতে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু সরকারের সব প্রচেষ্টাই এখন পর্যন্ত ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় নারীরা সন্তান জন্মদানে আগ্রহ দিন দিন হারিয়ে ফেলছেন। দেশটিতে গড়ে একজন নারীর তার জীবনের পূর্ণ প্রজনন সময়ে সন্তান জন্মদানের হার মাত্র ০ দশমিক ৭২। গত বছরও যে হার ছিল ০ দশমিক ৭৮।
শিশু জন্ম ও নারী প্রজনন হার নিয়ে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ পায়।
২০১৮ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়াই দ্য অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) এর একমাত্র সদস্য যাদের নারী প্রজনন হার ১ এর নিচে। এ পরিস্থিতিতে জন্মহারের নিম্নগতি আটকাতে জাতীয়ভাবে অগ্রাধিকার ভিক্তিতে কাজ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে দেশটির সরকার। গত ডিসেম্বরে সরকার থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ‘অসাধারণ কিছু ব্যবস্থা’ গ্রহণের প্রতিশ্রুতিও এসেছে।
এ বছর এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের জন্য আরও বাসস্থান এবং আরও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, যাতে জন্মহার হ্রাসের প্রবণতা আটকে দেওয়া যায়।
দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজ ব্যবস্থায় বিয়েকে সন্তান জন্মদানের পূর্বশর্ত হিসেবে দেখা হয়। সেখানে শিশু জন্মহার হ্রাসের পাশপাশি তরুণদের মধ্যে বিয়ে করার প্রবণতাও হ্রাস পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে জীবনযাত্রার অত্যধিক ব্যয় এবং অস্বাভাবিক দীর্ঘ কর্মঘণ্টাকে দায়ী করা হচ্ছে। নারীদের ঘর-বাহির দুটোই সামলাতে হয় বলে তাদের মধ্যে সন্তান জন্মদানে অনাগ্রহ বাড়ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যাগত সংকট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থার জন্য শীর্ষ ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। ৫ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার দেশটি এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ অর্ধেক হওয়ার পথে।
বর্তমান বিশ্বে জন্মহার হ্রাস এবং বয়স্ক জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সমস্যা শুধু দক্ষিণ কোরিয়াকেই মোকাবিলা করতে হচ্ছে না। বরং তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোকেও একই সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
২০২২ সালে জাপানে জন্মহার রেকর্ড হ্রাস পেয়ে ১ দশমিক ২৬ হয়। চীনে আরও কমে ১ দশমিক ০৯। যা দেশটিতে নতুন রেকর্ড।