হাইতির রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশ কয়েকটি স্থানে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, ওই বন্দুকযুদ্ধে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে এবং কয়েক ডজন বাণিজ্যিক এয়ারলাইনসকে অস্থির এই ক্যারিবীয় দেশটিতে ফ্লাইট স্থগিত করতে বাধ্য করেছে।
কারণ, বন্দুকযুদ্ধের সময় হাইতির প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সেখানে থাকা বিমান গুলির কবলে পড়ে। তাই আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ বিমান সংস্থাগুলো অপারেশন বাতিল করতে বাধ্য হয়।
এ ছাড়াও স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
দেশটির পুলিশ সংস্থার মতে, কানান সম্প্রদায়ের কাছে একটি থানায় হামলায় দুই নারীসহ অন্তত চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
একজন বিশিষ্ট গ্যাং নেতা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরিকে অপসারণ করার জন্য একাধিক দল রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা চালাতে একত্রিত হয়েছে। হামলায় কয়েকটি থানা লক্ষ্যবস্তু করা হয়, দুটিতে আগুন দেওয়া হয়। হামলার সময় টাউসাইন্ট লুভারচার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।’
‘বারবিকিউ’ নামে পরিচিত গ্যাং লিডার জিমি চেরিসিয়ার বন্দুকযুদ্ধে শুরু হওয়ার ঠিক আগে একটি সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিওতে আক্রমণের কথা প্রচার করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের বন্দুক দিয়ে এবং হাইতিয়ান জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা দেশকে মুক্ত করবো।’
এই পদক্ষেপটি এমন সময় আসলো যখন প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি গ্যাংদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করার জন্য হাইতিতে কেনিয়ার সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছেন।
হাইতির জাতীয় পুলিশের প্রধান ফ্রান্টজ এলবে এবং পুলিশের মুখপাত্র গ্যারি ডেসরোসিয়ার হেনরির পদক্ষেপের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
উল্লেখ্য, বর্তমানে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক উভয় সংকটে নিমজ্জিত হাইতি। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ দখল নিয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নৃশংস সহিংসতা চালিয়েছে এবং অর্থনীতিকে স্থবির করে দিয়েছে।
একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী হেনরিকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবিতে গত সপ্তাহে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে।
হাইতিতে বর্তমানে কোনও নির্বাচিত সরকার নেই। হেনরি ২০২১ সালের জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোইসের হত্যার পরপরই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন।
রাজনৈতিক সমঝোতার আওতায় চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার কথা থাকলেও তা এখনও করা হয়নি।
অন্যদিকে, কেনিয়ার পুলিশ অফিসারদের হাইতিতে মোতায়েন করার বিষয়ে এগিয়ে যাওয়ার আশায় হেনরি কেনিয়ায় ভ্রমণ করেছিলেন।
পূর্ব আফ্রিকান দেশটির একটি আদালত জানুয়ারির শেষের দিকে রায় দিয়েছিল যে, প্রস্তাবিত মোতায়েনটি অসাংবিধানিক। তবে হেনরি এবং কেনিয়ার কর্মকর্তারা একটি চুক্তিতে কাজ করছেন, যা শীঘ্রই হাইতিতে বাহিনী পৌঁছানোর অনুমতি দেবে।
বৃহস্পতিবার কমিউনিটি অফ ল্যাটিন আমেরিকান অ্যান্ড ক্যারিবিয়ান স্টেটস (সিইএলএসি) শীর্ষ সম্মেলনের আগে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘বছরের পর বছর ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার পর হাইতির একটি সমাধান দরকার।’
গুতেরেস ক্যারিবিয়ান দেশ সেন্ট ভিনসেন্টে বলেন, ‘আপনি হাইতিতে যতোটা সম্ভব পুলিশ বাহিনী রাখতে পারেন। কিন্তু, যদি কোনও রাজনৈতিক সমাধান না হয়, তবে সমস্যার সমাধান হবে না।’