ভারতে বহুল আলোচিত ‘মহাদেব অনলাইন বেটিং অ্যাপ’ নামে একটি জুয়ার অ্যাপের মামলার তদন্তে বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বোন জান্নাতুল হাসানের নাম উঠে এসেছে।
শুক্রবার (৮ মার্চ) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটের (ইডি) তদন্তে জান্নাতুল হাসানের নাম উঠে এসেছে। মামলার তদন্তের সময় আরও দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার গিরিশ তালরেজা এবং সুরজ চোখানি নামে দুজন মহাদেব অ্যাপের অন্যতম পরিচালক হরিশঙ্কর তিব্রেওয়ালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে জানা গেছে। তিনি দুবাইভিত্তিক হাওয়ালা অপারেটর।
মহাদেব অনলাইন বেটিং অ্যাপ মামলা সম্পর্কে তদন্ত সংস্থা ইডি জানায়, এটি একটি হাই প্রোফাইল অর্থ কেলেঙ্কারির মামলা। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পোকার, তাস, ব্যাডমিন্টন, টেনিস, ফুটবল এবং ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অবৈধ জুয়ার ব্যবসা চলে। সেই অর্থ পাচার হয় বিদেশে।
তদন্তে দেখা যায়, মহাদেব অ্যাপটি পরিচিত সহযোগীদের প্যানেল এবং শাখা ফ্র্যাঞ্চাইজি করে ৭০–৩০ শতাংশ হারে লাভের অনুপাতে পরিচালিত হয়। ভুয়া তথ্য দিয়ে বেনামি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের একটি জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অর্থ পাচার করে এই চক্র। এই চক্রটি দৈনিক ২০০ কোটি রুপি আয় করেছে বলে জানতে পেরেছে ইডি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইডি তিব্রেওয়ালের ডেরায় অভিযান চালিয়ে দেখতে পেয়েছে, তিনি ‘স্কাই এক্সচেঞ্জ’ নামে একটি অবৈধ বেটিং ওয়েবসাইটের মালিক। নিজেই সেটি পরিচালনা করেন। তার দুবাইভিত্তিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে, তিনি বাজিতে জেতা আয় ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট (এফপিআই) রুটের মাধ্যমে ভারতীয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন।
ইডির মতে, সুরাজ চোখানি তিব্রেওয়ালের টাকা তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন। এ ছাড়া, চোখানি বাংলাদেশে ইলেভেন উইকেট.কম নামে একটি অ্যাপে বিনিয়োগ করেছিলেন। এই জুয়ার অ্যাপের একজন অংশীদার বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বোন জান্নাতুল হাসান।
চোখানি নেপালের কাঠমান্ডুতে অবস্থিত ডেল্টিন ক্যাসিনো ৪০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছিলেন এবং ক্যাসিনোটির একটি বড় অংশের মালিকও তিনি। ‘লোটাস ৩৬০’ এবং ‘মহাদেব বুক অ্যাপ’ এর মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ আয় থেকে এই বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছে ইডি।
ইডির তদন্তে আরও জানা গেছে, গিরিশ তালরেজা ‘লোটাস ৩৬০’ অ্যাপের কার্যক্রমেরও অংশীদার। এটি আবার মহাদেব অনলাইন বুকের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তার ‘লোটাস ৩৬০’ এর অবৈধ কার্যক্রমে রতন লাল জৈন এবং সৌরভ চন্দ্রকর নামে আরও দুজন রয়েছেন।
একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে তদন্ত সংস্থা ইডি নগদ ১ কোটি রুপি উদ্ধার করেছে। অর্থ পাচারের মামলায় মোট ১ হাজার ৭৬৪ দশমিক ৫ কোটি রুপির অস্থাবর সম্পত্তি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অধীনে জব্দ করেছে ইডি।
এর আগে একই মামলার সঙ্গে জড়িত আরও নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। গত জানুয়ারিতে ইডি মহাদেব অনলাইন বেটিং এবং গেমিং অ্যাপ মামলায় অর্থ পাচারের তদন্তের জন্য নিতিন তিব্রেওয়াল এবং অমিত আগরওয়াল নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।