ভারতের লোকসভা নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার মাত্র দু’চারদিন আগে সরকারের অনুরোধ উপেক্ষা করে আকস্মিক পদত্যাগ করেছেন ভারতের নির্বাচন কমিশনের কমিশনার অরুণ গোয়েল। এর আগেই তিন সদস্যের এই কমিশনে একজন কমিশনার পদ ফাঁকা ছিল। কমিশনে এখন অবশিষ্ট আছেন শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা সিইসি রাজীব কুমার।
অরুণ গোয়েলের এই পদত্যাগ নিয়ে ভারতের সর্বত্র আলোচনা, সমালোচনা। এমনকি এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিরোধী দল কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস। তারা নির্বাচন কমিশনকে ‘নির্বাচন বাদ দেয়া’ কমিশন হিসেবে কটাক্ষ করেছে।
শনিবার (৯ মার্চ) সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত একটি নতুন আইন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল কমিশনার অরুণ গোয়েলের। এ কারণে তিনি লোকসভা নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকতেই শনিবার পদত্যাগ করেছেন কমিশনার। তার পদত্যাগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছেন প্রেসিডেন্ট দ্রুপদি মুরমু।
আইন মন্ত্রণালয়ের নোটিফিকেশন অনুযায়ী, এই পদত্যাগ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। ফলে কমিশনে এখন আছেন শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।
সূত্রগুলো বলেছে, সরকার তাকে পদত্যাগ করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন অরুণ গোয়েল। তিনি যে অসুস্থ এমন জল্পনা আগেই খারিজ করে দেয়া হয়েছিল। শীর্ষ কর্মকর্তারা আগেই বলেছেন, পুরোপুরি সুস্থ আছেন অরুণ গোয়েল। তাহলে কেন আকস্মিকভাবে এই অসময়ে তার পদত্যাগ?
এমন প্রশ্ন এখন চায়ের দোকান থেকে উপরতলা পর্যন্ত। এর জবাবে নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার ও কমিশনার অরুণ গোয়েলের মধ্যে ফাইল নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। গত বছর শেষের দিকে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনে দেশের শীর্ষ নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সংস্কার করা হয়েছে। সংশোধিত এই প্রক্রিয়ায় বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ভারতের প্রধান বিচারপতিকে। এ ঘটনায় মতবিরোধের কারণে পদত্যাগ করে থাকতে পারেন অরুণ গোয়েল।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই নির্বাচন কমিশনারের আকস্মিক বিদায় নেয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে।
এক্সে তিনি ইংরেজিতে লিখেছেন, লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার অল্প কয়েকদিন সময় হাতে আছে। এই মুহূর্তে ভারতে এখন একজনমাত্র নির্বাচন কমিশনার আছেন। কিন্তু কেন? আগেও আমি বলেছি, যদি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যায়ক্রমিকভাবে ধ্বংস করা বন্ধ না করি আমরা, তাহলে আমাদের গণতন্ত্রকে দখল করবে একনায়কতন্ত্র। যেহেতু নির্বাচন কমিশনারদের বাছাইয়ের নতুন প্রক্রিয়ায় সব ক্ষমতা দেয়া হয়েছে কার্যত ক্ষমতাসীন দল ও প্রধানমন্ত্রীকে, তাই মেয়াদ শেষ হওয়ার ২৩ দিন পরেও কেন নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেননি? মোদি সরকারকে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে। যৌক্তিক ব্যাখ্যাও তাদের দিতে হবে।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে.সি বেনুগোপাল বলেন, লোকসভা নির্বাচন যখন দ্বোরগোড়ায় তখন নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল পদত্যাগ করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের সুস্থতায় এটা এক গভীর উদ্বেগের বিষয়। ২০১৯ সালের নির্বাচনে অশোক লাভাসার ভিন্নমত ও তার তদন্তের উদাহরণ টেনে এনে বেনুগোপাল সাংবিধানিক সংস্থাগুলোর ওপর সরকারের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিগত লোকসভা নির্বাচনের সময় বিভিন্ন মডেল কোড লঙ্ঘনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করে পদত্যাগ করেছিলেন কমিশনার অশোক লাভাসা।
উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সাকেট গোখলে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন নির্বাচন কমিশনে দু’টি পদে নিয়োগ দিতে হবে। আকস্মিকভাবে নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল পদত্যাগ করেছেন। অন্য নির্বাচন কমিশনারের পদও শূন্য। ফলে এখন নির্বাচন কমিশনে আছেন একজনমাত্র ব্যক্তি। তিনি হলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
উল্লেখ্য, অরুণ গোয়েল অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি পাঞ্জাবে ভারতীয় প্রশাসনিক পর্যায়ে ১৯৮৫ সালের ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে নির্বাচন কমিশনে যোগ দেন।