ওরাং ওটাংয়ের নিজস্ব চিকিৎসার প্রমাণ মিলেছে

, আন্তর্জাতিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাউথ-ইস্ট এশিয়া, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড | 2024-05-08 10:14:23

প্রাণীরা যে নিজেদের চিকিৎসা নিজেরা করতে পারে এবং তাদের নিজস্ব চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে, সেটি এবার প্রমাণ করেছে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা অঞ্চলের রাকুস নামে একটি ওরাং ওটাং।

সায়েন্টেফিক রিপোর্ট নামে বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, রাকুস ওরাং ওটাংটি পুরুষ। অন্য পুরুষ ওরাং ওটাংদের সঙ্গে মারামারি করতে গিয়ে তার গালের ওপরে একটি ক্ষত হয়েছিল। পরে সে নিজেই তার চিকিৎসা করেছে।

গবেষকদের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রাকুস নিজে লিয়ানা পাতা সংগ্রহ করে। এই পাতাটি প্রাণীরা খেয়ে থাকে সাধারণত। তবে রাকুস সেটি না খেয়ে চিবাতে শুরু করে। এবং পাতাগুলো দিয়ে পেস্ট তৈরি করে। পেস্টটি নিজের আঙুল দিয়ে গালের ক্ষতস্থানে মেখে দেয়। ক্ষতটিতে যেন পাতার রস পৌঁছায় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল তার।

ক্ষতস্থানে লিয়ানা পাতার রস দেয়ার ৫ দিনের মধ্যেই সেই ক্ষতটি বন্ধ হয়ে যায় এবং একমাস পর আর কোনো ক্ষতই প্রায় দেখা যাচ্ছিল না।

বণ্যপ্রাণীর নিজের চিকিৎসা করার প্রথম নথিভুক্ত প্রমাণ রাকুসের এই ঘটনা। এই পাতা এবং পরবর্তীতে তার গুণাবলি যাচাই করে গবেষকরাও নিশ্চিত হন যে লিয়ানা পাতার ওষুধি গুণাবলী রয়েছে।

এই পাতা আকার কুনিং নামেও পরিচিত। এই পাতার ওষুধি গুণের মধ্যে রয়েছে, ব্যথা উপশম, জ্বর কমানো। এছড়াও ডায়াবেটিস এবং ম্যালেরিয়ার মতো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটিতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

সায়েন্টিফিক রিসার্চ জানিয়েছে, এর আগে বন্যপ্রাণীদের মধ্যে শিম্পাঞ্জির নিজের চিকিৎসা করার তথ্য রয়েছে। তবে সেটি এভাবে প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ইন্দোনেশিয়ার মেদানের সুয়াক প্রকল্পের গবেষক উলিল আজহারি ২০২২ সাল থেকে ওরাং ওটাংয়ের আচরণ রেকর্ড করছিলেন। তিনি বলেন, বণ্যপ্রাণী ক্ষত চিকিৎসায় নিজেদের উদ্ভাবনী আচরণ এবারই প্রথমবারের মতো রেকর্ড করা হলো। পদ্ধতিগতভাবে জৈবিক প্রক্রিয়ায় কোনো বণ্যপ্রাণীর এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি মনুষ্য প্রজাতির গবেষণাতেও ভূমিকা রাখবে।

বিজ্ঞানীরা ১৯৯৪ সাল থেকে ইন্দোনেশিয়ার গুনুং লিউসার ন্যাশনাল পার্কে ওরাং ওটাং পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে তারা আগে এই আচরণটি দেখেননি।

ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের সহ-লেখক ক্যারোলিন শুপ্লি বলেছেন, রাকুস পারেক্ আসার আগেই বণ্য ওরাং ওটাংদের থেকেই হয়তো এই প্রক্রিয়া শিখে এসেছে। বিজ্ঞানীদের সামনে সে এই কৌশল শিখেনি।

রাকুস এই ন্যাশনাল পার্ক এলাকার বাইরে জন্মগ্রহণ করেছিল। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে ওরাং ওটাং অন্য প্রাণীরদের সঙ্গেও লড়াই করে। তবে রাকুস এর আগে অন্যান্য আঘাতের চিকিৎসা করেছিল কিনা তা জানা যায়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর