ভারতের নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যমতে, সদ্য শেষ হওয়া ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩ আসনে মোট ৮ হাজার ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এর মধ্যে ৮৬.১ শতাংশ অর্থাৎ ৭ হাজার ১৯৪ জন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে; যার মোট অর্থের পরিমাণ ১৬ কোটি ৩৬ লাখ কোটি রুপি। এসব প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ নির্বাচনি কেন্দ্রে প্রদত্ত মোট বৈধ ভোটের ছয় ভাগের এক ভাগ ভোট পেতে ব্যর্থ হয়েছেন।
জনগণের প্রতিনিধিত্ব আইন-১৯৫১ অনুযায়ী ভারতের সাধারণ নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাদের ২৫ হাজার রুপি জামানত হিসাবে জমা দিতে হয়।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য শুধুমাত্র গুরুতর প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ইসি বাধ্যতামূলকভাবে একটি জামানত জমা দিতে হবে।
২০০৯ সালে অসংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের জন্য জামানত জমা দেওয়া অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে ২৫ হাজার রুপি এবং সংরক্ষিত তফসিলি জাতি (এসসি) এবং তফসিলি উপজাতি (এসটি) আসনের প্রার্থীদের জন্য ১২ হাজার ৫০০ রুপি করেছিল। যদিও বিধানসভা নির্বাচনে, অসংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের জন্য ১০ হাজার রুপি এবং এসসি ও এসটি আসনের জন্য জামানত হিসাবে জমা দেওয়া অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার রুপি।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রদত্ত ভোটের অন্তত এক-ষষ্ঠাংশ (১/৬) জিততে ব্যর্থ প্রার্থীদের বাজেয়াপ্ত অর্থের পরিমাণ ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কে বা সরকারি কোষাগারে জমা হয়।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের যে সংখ্যা ছিল, তার তুলনায় সংখ্যাটা এবারের নির্বাচনে বেড়েছে। ওই বছরে ৮,০৫৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কিন্তু ৬৯২৩ জন (৮৬ শতাংশ) প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছিল। যার মোট অর্থের পরিমাণ ১৫.৮৭ কোটি রুপি।
সামগ্রিকভাবে জামানত জব্দ হওয়া প্রার্থীদের তালিকায় এগিয়ে রয়েছে স্বতন্ত্র দলের প্রার্থীরা। গোটা দেশজুড়ে স্বতন্ত্র দলের হয়ে ৩,৯২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, এর মধ্যে ৩,৯০৪ প্রার্থী তাদের জামানত হারিয়েছেন। এই জামানত জব্দের পরিমাণ ৮.৯৬ কোটি রুপি।
বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, সবচেয়ে বেশি প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে 'বহুজন সমাজ পার্টি'র (বিএসপি)। ভারত জুড়ে তাদের ৪৮৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে খারাপ ফল বিএসপি'র। একজন প্রার্থীও জয়ের মুখ দেখতে পারেনি। মায়াবতীর দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৪৮৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ৯৭.৫ শতাংশ অর্থাৎ ৪৭৬ জন প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছে। জামানত জব্দকৃত মোট অর্থের পরিমাণ ১.০৪ কোটি রুপি।
এই নিরিখে ভারতের অন্য চারটি জাতীয় রাজনৈতিক দলের কেউই বিএসপির ধারে কাছে পৌঁছাতে পারেনি। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও খুব খারাপ ফল করেছিল বিএসপি। ওই নির্বাচনে তাদের মোট ৩৮৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীর মধ্যে ৩৪৫ জন (৯০.০৮ শতাংশ) প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছিল।
অন্য দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কংগ্রেসের ৫১ জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছে। এরপর রয়েছে প্রকাশ আম্বেদকরের নেতৃত্বাধীন বঞ্চিত বহুজন আঘাদির (ভিবিএ) ৩৭ জন, অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লকের (এআইএফবি) ৩৩ জন, সিপিআই (এম) ৩০ ও বিজেপির ২৮ জন প্রার্থী, যাদের জামানত জব্দ হয়েছে।
দেশটির রাজ্যগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জামানত জব্দ হয়েছে মহারাষ্ট্রে। এই রাজ্যটিতে ১ হাজার ১২১ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০২০ জন প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছে। এরপরে রয়েছে তামিলনাড়ু, ৯৫০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৮৬৩ জন, উত্তর প্রদেশে ৮৫১ জন প্রার্থীর মধ্যে জামানত গেছে ৬৮১ জনের। এছাড়া তেলেঙ্গানায় ৪৮৪ জন, কর্ণাটকে ৪১৮ জন, পশ্চিমবঙ্গে ৪১৬ জন, বিহারে ৪১৪ জন, অন্ধ্রপ্রদেশে ৪০৪ জন, মধ্যপ্রদেশে ৩১১ জন এবং পাঞ্জাবে ২৮৯ জন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এছাড়াও মেঘালয়, মণিপুর, সিকিম, মিজোরামের মতো রাজ্যগুলো যেখানে একটি কিংবা দুটি লোকসভার আসন রয়েছে, সেসব রাজ্যগুলোতেও নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের অর্ধেকেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
২০১৯ সালের নির্বাচনেও তিনটি রাজ্যে সবচেয়ে বেশি জামানত হারিয়েছে। এগুলো হল- উত্তরপ্রদেশ ৮১৯ জন, তামিলনাড়ু ৭৭৪ জন এবং মহারাষ্ট্রে ৭৬৮ জন প্রার্থীর।