নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হওয়া প্রথম বিতর্কে ভালো করতে না পারায় খোদ নিজের দলেই সমালোচনার শিকার হচ্ছেন জো বাইডেন। তার বিকল্প খুঁজছে ডেমোক্র্যাটরা বলে খবর চাউর হয়েছে।
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কেউই প্রথম বিতর্কে চমক দেখাতে না পারলেও তুলনামূলকভাবে বেশি খারাপ করেছেন বাইডেন।
৮১ বছর বয়সী বাইডেনের সমর্থকরা আশা করেছিলেন, বিতর্কে তিনি তার বয়স নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগ দূর করতে পারবেন। কিন্তু তা হয়নি। উল্টো বল গেছে ট্রাম্পের কোর্টে।
এ নিয়ে বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক বলেছেন, বাইডেনের বিতর্কে ভাল করতে না পারাটা তার প্রতিপক্ষ ট্রাম্পকে নির্বাচনী দৌড়ে একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। ফলে নানা ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়েও ট্রাম্পের আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার পট প্রস্তুত হয়েছে।
ইউরোপ, এশিয়াসহ বিশ্বের অন্য আরও জায়গায় ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে ফেরার বিষয়টি উদ্বেগজনক। কারণ, ট্রাম্প এর আগে ক্ষমতায় থাকার সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বের দেশগুলোর সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা গেছে প্রায়ই, বলেন তারা।
বিতর্কে হতাশাজনক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করায় জো বাইডেনকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদক পরিষদ। প্রভাবশালী গণমাধ্যমটিতে শুক্রবার (২৮ জুন) প্রকাশিত এক মতামত কলামে এ আহ্বান জানানো হয়।
সম্পাদক পরিষদ বলেছে, প্রেসিডেন্ট বৃহস্পতিবার রাতে একজন মহান সরকারি কর্মচারীর ছায়া রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে কী করবেন, তার ব্যাখা দিতে হিমশিম খেয়েছেন তিনি। হিমশিম খেয়েছেন মি. ট্রাম্পের উসকানির জবাব দিতে। হিমশিম খেয়েছেন ট্রাম্পকে তার মিথ্যা কথা, ব্যর্থতা ও ভয়ানক সব পরিকল্পনার জন্য জবাবদিহি করাতে। একাধিকবার তিনি একটা বাক্য শেষ করতে গিয়ে সংগ্রাম করেছেন।
চারদিক থেকে এমন সমালোচনার পরও হাল ছাড়তে রাজি নন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার দাবি, তিনি ট্রাম্পকে হারাতে পারবেন। শুক্রবার (২৮ জুন) নর্থ ক্যারোলাইনায় একটি র্যালিতে অংশ নিয়ে বাইডেন বলেন, আমি জানি, আমি তরুণ নই। আমি আগে যেমন সহজেই হাঁটতে পারতাম এখন আর তা পারি না। আমি আগের মতো ভালো বিতর্ক করতে পারিনি। কিন্তু আমি জানি কীভাবে সত্য বলতে হয় এবং কীভাবে কাজ করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে আমি জয়ী হতে চাই। স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আরও চার বছর আমি মার্কিন শাসনভার রক্ষা করতে পারব।
তখন উচ্ছ্বসিত জনতা উচ্চস্বরে স্লোগান দিতে থাকে, ‘আরও চার বছর, আরও চার বছর’ এবং ‘যুক্তরাষ্ট্র, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’।
এদিকে বাইডেনের বিতর্ক নিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, হ্যাঁ শুরুটা ধীরগতি ছিল তবে শেষটা জোরালো হয়েছে। টাইমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদিন বাইডেন ছোট এবং ধীর গতিতে মঞ্চে আসেন। তাকে বিতর্ক করার সময় প্রায় ডেস্কে হাত ধরে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া বিতর্কের সময় নির্দিষ্ট প্রসঙ্গের জবাব না দিয়ে অপ্রাসঙ্গিক উত্তর দিয়েছেন।
সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান রোডনি ডেভিস বলেছেন, বিতর্কটি ছিল ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিষ্কার জয়’। আমেরিকাজুড়ে ডেমোক্র্যাটদের জন্য দুঃখজনক যে বিতর্কের ধরণটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সহায়তা করেছে।
ডেমোক্রেটিক পার্টিকে বাইডেনের বিকল্প হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে শীর্ষে রাখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে নির্বাচনে প্রতিযোগিতার জন্য শীর্ষ প্রতিযোগী হবেন তিনি। তবে অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীরাও আলোচনায় থাকবেন, যারা আগে যুক্তি দিয়েছিলেন যে তারা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর প্রচার চালাতে পারবেন।
বাইডেনের বিকল্প বিবেচনা করার মতো আরেকটি গ্রুপ রয়েছে, ‘সুপার ডেলিগেটস’। প্রায় ৭০০ জন সিনিয়র নেতা এবং নির্বাচিত কর্মকর্তাদের একটি দল। তাদের অবস্থানের ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনভেনশনে প্রতিনিধি হয়। সাধারণত দলীয় নিয়মের অধীনে তারা প্রথম ব্যালটে ভোট দিতে পারেন না। তবে তারা মনোনয়ন পরিবর্তন করতে পারেন। তারা পরবর্তী ব্যালটে ভোট দিতে পারেন।
তবে সত্যি যদি নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাসের মধ্যে একজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান, তাহলে এটি একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করবে। তবে এ সংকট কাটানোর জন্য ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের কিছুটা ভিন্ন কৌশল রয়েছে।
ডেমোক্র্যাটরা এক্ষেত্রে পার্টির চেয়ার ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বের সঙ্গে পরামর্শ করেন। পার্টির নিয়ম অনুযায়ী কনভেনশনের পর শূন্যস্থান পূরণ করার ক্ষমতা ডেমোক্র্যাটিক জাতীয় কমিটিকে দেওয়া হয়।