বিশ্বের শীর্ষ ১০টির মধ্যে নয় কোম্পানি মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2024-07-02 15:10:19

অ্যামাজন, বিএমডব্লিউ, নেসলে, রিও টিন্টো, ফাইজার, শিন এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডসহ বিশ্বের ২ হাজার শীর্ষ প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি কোম্পানি মানবাধিকার, কাজের পরিস্থিতি এবং কর্পোরেট নীতিমালার প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) অলাভজনক সংস্থা ওয়ার্ল্ড বেঞ্চমার্কিং অ্যালায়েন্স (ডব্লিউবিএ) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায়। খবর আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব কোম্পানিগুলো বিশ্ব অর্থনীতির মোট ৪৫ শতাংশের সমান সম্পদ ধরে রাখা সত্ত্বেও মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের জীবনে ইতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি।

ডব্লিউবিএ- এর সোশ্যাল বেঞ্চমার্ক প্রধান নমিত আগরওয়াল বলেছেন, কোম্পানিগুলোর প্রভাব ও সম্পদ কিছু বৃহত্তম দেশের সমান, যা অনেক দেশের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি লোককে প্রভাবিত করতে পারে। তবে এটাও সত্য যে, এই কোম্পানিগুলোর ৯০ শতাংশ মৌলিক সামাজিক প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। যা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর প্রতি কোম্পানিগুলোর প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে না।

তিনি বলেন, সমতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব তৈরিতে নেতৃত্ব প্রদর্শন করা সরকারগুলো দারিদ্র্য দূরীকরণে, বৈষম্য হ্রাস করতে এবং সবার জন্য উপযুক্ত কাজের সুযোগ নিশ্চিত করতে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়তা করতে পারে। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য নিয়ন্ত্রণ, নির্দেশিকা এবং বাহ্যিক চাপ প্রয়োজন।

ডব্লিউবিএ- কোম্পানিগুলোর দেওয়া প্রতিশ্রুতি মূল্যায়ন করেছে।

অন্তত ৩০ শতাংশ কোম্পানি সম্ভাব্য ২০ পয়েন্টের মধ্যে ০ থেকে ২ এর মধ্যে স্কোর করেছে। যেখানে এটি স্পষ্ট যে কোম্পানিগুলো তাদের সমাজিক প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

ডব্লিউবিএ- তথ্যানুযায়ী ৬০ শতাংশেরও বেশি কোম্পানি মজুরি সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশ করে এবং কমপক্ষে ৪৫ শতাংশ কর্মঘণ্টা সম্পর্কে কিছু তথ্য জানায়, মাত্র ২৯ শতাংশ সরবরাহকারী কর্মক্ষেত্রের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধুমাত্র ২০ শতাংশ তাদের সাপ্লাই চেইন অংশীদারদের উপর মানবাধিকারের যথাযথ পূরণ করে এবং মাত্র ৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সঠিক মজুরি প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সূচক অনুসারে, বেশিরভাগ কোম্পানি কর্পোরেট দায়িত্বের ক্ষেত্রেও কম স্কোর করেছে, মাত্র ১০ শতাংশ কোম্পানি তাদের ট্যাক্স পেমেন্ট প্রকাশ করে এবং ৯ শতাংশ কোম্পনি কীভাবে কর্মচারী এবং ট্রেড ইউনিয়নের মতো স্টেকহোল্ডারদের সাথে জড়িত এসবের তাদের রূপরেখা দেয়।

ডব্লিউবিএ বলছে, জরিপ করা কোম্পানিগুলির মাত্র ৫ শতাংশ তাদের অর্থনৈতিক প্রভাবের বাইরে থাকা সত্ত্বেও কর্পোরেট লবিংয়ে তাদের ব্যয় প্রকাশ করেছে।

"বিশ্বের ২০০০টি সবচেয়ে প্রভাবশালী কোম্পানির হাতে ৪৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পত্তি রয়েছে। যা বিশ্বে টেকসই উন্নয়নকে পরিচালিত করতে পারে বা বাধা দিতে পারে। তবে বর্তমানে কোম্পানিগুলো বিশ্বকে কোন দিকে ঠেলে দিচ্ছে তা জানার কোনো উপায় নেই। বেশিরভাগ কোম্পানি তাদের রাজনৈতিক কৌশল বা ব্যয় সম্পর্কে স্বচ্ছ নয়।

জরিপ করা ১৪টি সেক্টরের মধ্যে, পোশাক, পাদুকা, আইসিটি সংক্রান্ত কোম্পানিগুলো সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশ থেকে ৩৩ শতাংশ স্কোর পেয়েছে। তহবিল এবং আর্থিক পরিষেবা খাত সবচেয়ে কম ১১ শতাংশ স্কোর করেছে, তারপরে পরিবহন শিল্প ১৪ শতাংশ এবং রিয়েল এস্টেট ১৬ শতাংশ।

অঞ্চলভেদে এশিয়া প্যাসিফিকের সদর দফতরের কোম্পানিগুলি সর্বোচ্চ স্কোর করেছে। তাদের গড় স্কোর ৩৫ শতাংশ।

ডব্লিউবিএ বলেছে, ইউরোপের ৩৩ শতাংশ এবং উত্তর আমেরিকা ২৪ শতাংশ গড় স্কোর করেছে।

মধ্যপ্রাচ্য সর্বনিম্ন ১১ শতাংশ স্কোর করেছে, দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়া ১৪ শতাংশ।

ডব্লিউবিএ বলেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে দারিদ্র্য অর্ধেকসহ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে বেসরকারি খাতকে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তৈরি করতে সাহায্য করতে হবে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কোম্পানিগুলিকে সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণ করতে হবে। যার মধ্যে মানবাধিকারকে সম্মান করা, ন্যায্য মজুরি এবং নিরাপদ পরিবেশসহ সঠিক কাজ প্রদান করা। শ্রমিকদের করের ন্যায্য অংশ প্রদান করা, দায়িত্ব নৈতিকভাবে কাজ করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর