নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে জো বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর আলোচনা খোদ ডেমোক্রেটিক দলের মধ্যে জোরালো হচ্ছে। এমন সময় ৮১ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট প্রথম বিতর্কে ভালো করতে না পারার জন্য বিদেশ ভ্রমণকে দায়ী করেছেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, একের পর এক সফরের কারণে তিনি ক্লান্ত ছিলেন। আর তারই প্রভাব পড়েছে বিতর্কে। বাইডেন বলেন, আমি আমার প্রতিযোগীর কথা ঠিকমতো শুনতে পাইনি। আর ক্লান্তির কারণে মঞ্চে প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
খোদ ডেমোক্রেটিক দলের মধ্যেই বাইডেনের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। টেক্সাসের এক ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতা তাকে আসন্ন নভেম্বরের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন। আর এই পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে নিতে এমন মন্তব্য করলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, বাইডেনের বিতর্কে ভাল করতে না পারাটা তার প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নির্বাচনী দৌড়ে একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। ফলে নানা ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়েও ট্রাম্পের আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার পট প্রস্তুত হয়েছে।
এক বিবৃতিতে ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতা লয়েড ডগেট বলেন, আমি আশা করি, তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মতো বেদনাদায়ক ও কঠিন সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিতর্কে হতাশাজনক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করায় জো বাইডেনকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদক পরিষদও।
সম্পাদক পরিষদ বলেছে, বিতর্কে প্রেসিডেন্ট একজন মহান সরকারি কর্মচারীর ছায়া রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে কী করবেন, তার ব্যাখা দিতে হিমশিম খেয়েছেন তিনি। হিমশিম খেয়েছেন মি. ট্রাম্পের উসকানির জবাব দিতে। হিমশিম খেয়েছেন ট্রাম্পকে তার মিথ্যা কথা, ব্যর্থতা ও ভয়ানক সব পরিকল্পনার জন্য জবাবদিহি করাতে। একাধিকবার তিনি একটা বাক্য শেষ করতে গিয়ে সংগ্রাম করেছেন।
চারদিক থেকে এমন সমালোচনার পরও হাল ছাড়তে রাজি নন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার দাবি, তিনি ট্রাম্পকে হারাতে পারবেন।
এদিকে, বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং ইপসোসের এক জরিপে দেখা গেছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারাতে ডেমোক্রেটদের শক্তিশালী প্রার্থী হতে পারেন সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা।
প্রকাশিত জরিপে দেখা গেছে, সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা অন্তত ১০ পয়েন্টে ট্রাম্পকে পরাজিত করবেন। শুধু তাই নয় জরিপে এটাও দেখা গেছে, মিশেল ছাড়া ডেমোক্র্যাট শিবিরে আর কোনো প্রার্থী নেই যিনি ট্রাম্পকে হারাতে পারবেন।
জরিপটিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের কাছে বাইডেনের বিকল্প হিসেবে ডেমোক্র্যাট দলের কল্পিত বা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মিশেলকে রাখা হয়েছিল। ট্রাম্প কিংবা মিশেল কাকে ভোট দেবেন এমন প্রশ্নে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ মিশেলকেই বেছে নিয়েছেন। বিপরীতে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন ৩৯ শতাংশ মানুষ।
আরও দেখা গেছে, প্রতি তিনজন ডেমোক্র্যাটের মধ্যে অন্তত একজন মনে করেন ট্রাম্পের সঙ্গে সাম্প্রতিক বিতর্কের পর বাইডেনের উচিত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো।
বাইডেনের বিকল্প বিবেচনা করার মতো আরেকটি গ্রুপ রয়েছে, ‘সুপার ডেলিগেটস’। প্রায় ৭০০ জন সিনিয়র নেতা এবং নির্বাচিত কর্মকর্তাদের একটি দল। তাদের অবস্থানের ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনভেনশনে প্রতিনিধি হয়। সাধারণত দলীয় নিয়মের অধীনে তারা প্রথম ব্যালটে ভোট দিতে পারেন না। তবে তারা মনোনয়ন পরিবর্তন করতে পারেন। তারা পরবর্তী ব্যালটে ভোট দিতে পারেন।
তবে সত্যি যদি নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাসের মধ্যে একজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান, তাহলে এটি একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করবে। তবে এ সংকট কাটানোর জন্য ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের কিছুটা ভিন্ন কৌশল রয়েছে।
ডেমোক্র্যাটরা এক্ষেত্রে পার্টির চেয়ার ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বের সঙ্গে পরামর্শ করেন। পার্টির নিয়ম অনুযায়ী কনভেনশনের পর শূন্যস্থান পূরণ করার ক্ষমতা ডেমোক্র্যাটিক জাতীয় কমিটিকে দেওয়া হয়।