ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রির ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে যুক্তরাজ্য বলে জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই।
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে তোলা আপত্তিও যুক্তরাজ্য প্রত্যাহার করে নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে ভালোভাবে অবগত লেবার পার্টির একাধিক সূত্র মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন সরকার সামনের দিনগুলোতে ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রির ওপর সম্ভবত কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে। তবে অস্ত্র বিক্রি পুরোপুরি স্থগিত করা হবে না।
নতুন সরকারে দায়িত্ব পেয়ে গত সপ্তাহে কাজ শুরু করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দিনই ল্যামি বলেন, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইন কীভাবে প্রতিপালন করছে, সে বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
তার এ বক্তব্যের পর ইসরায়েলে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র বিক্রির ওপর বিধিনিষেধ আরোপের সম্ভাবনার বিষয়টি প্রকাশ পেল।
মিডল ইস্ট আইকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, হামলার কাজে ব্যবহার উপযোগী অস্ত্রের ওপর ওই বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে।
গত সপ্তাহে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইনপ্রণেতাদের বলেন, ‘ইসরায়েলে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের হামাসের আক্রমণের প্রেক্ষাপটে আমাদের দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র বিক্রির ওপর সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাটা সঠিক হবে না।’
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইঙ্গিত দেন যে, ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক মানবিক আইন প্রতিপালন করা বিষয়ে তিনি যে পর্যালোচনার অনুরোধ জানিয়েছেন, সেটিরই অংশ হিসেবে গাজায় দেশটি ব্যবহার করতে পারে এমন সব অস্ত্র বিক্রির ওপর বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করছেন তিনি।
গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ইসরায়েলে অস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম ও অন্যান্য উপকরণ বিক্রি করা নিয়ে শতাধিক রপ্তানির অনুমতি (এক্সপোর্ট লাইসেন্স) অনুমোদন করেছে।
যুক্তরাজ্যের ব্যবসা ও বাণিজ্যবিষয়ক দপ্তর গত জানুয়ারিতে হাইকোর্টে একটি হলফনামা দাখিল করে। তাতে দেখা যায়, অস্ত্র রপ্তানি তদারককারী সরকারি কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলে অস্ত্র ও সরঞ্জাম রপ্তানির ২৮টি অনুমতি এবং ২৮টি অনুমতির স্থগিত আবেদন চিহ্নিত করেছে।
এসব অস্ত্র ও উপকরণ গাজায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ব্যবহারের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
ইসরায়েলে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র বিক্রির ওপর কোনো নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে এর আওতায় ওই সব অনুমতি ও অনুমতির আবেদন পড়তে পারে।
এ বিষয়ে কাউন্সিল ফর আরব–ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের পরিচালক ক্রিস ডোয়েল মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রির বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য সরকারের সম্ভাব্য ওই পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা খুবই ভালোভাবে স্বাগত জানানো হবে।’
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্রের চালান স্থগিত রাখার হুমকি দিয়েছিল ওয়াশিংটন।
গত মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজার রাফায় ইসরায়েল পুরোদমে স্থল অভিযান চালালে অস্ত্রের ওই চালান আটকে দেওয়ার হুমকি দেন। যদিও পরে এ হুমকির বাস্তবায়ন করেননি তিনি।
এদিকে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অব জাস্টিস ফর প্যালেস্টিনিয়ানসের আইনি কর্মকর্তা জাকি সরাফ বলেন, ‘যুক্তরাজ্য সরকার ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি সীমিত করার এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় তোলা আপত্তি তুলে নেওয়ার যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তা অবিলম্বে কার্যকর করা উচিত।’