বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রশংসা করেছেন কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা ও লোকসভার সদস্য শশী থারুর।
সোমবার (১২ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতা এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমরা যদি তাকে (শেখ হাসিনা) সাহায্য না করতাম, তাহলে তা ভারতের জন্য অসম্মানের হতো। আমাদের বন্ধুর সঙ্গে যদি আমরা খারাপ আচরণ করতাম, তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ আমাদের বন্ধু হতে চাইত না।
শেখ হাসিনাকে ভারতের বন্ধু আর ভারতও তার বন্ধু উল্লেখ করে শশী থারুর বলেন, যখন বন্ধু বিপদে পড়ে, তখন তাকে সাহায্য করার আগে দুবার চিন্তা করতে হয় না। তাদেরকে সাহায্য করতে হয়, নিরাপত্তা দিতে হয়। ভারত ঠিক সেটাই করে দেখিয়েছে। আমরা কিছু মানদণ্ড মেনে কাজ করি। আমাদের সরকার তাকে এখানে এনে, নিরাপত্তা দিয়ে সঠিক কাজটিই করেছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা কতদিন এখানে থাকতে চান, তা আমাদের চিন্তার বিষয় নয়। আপনি কাউকে বাড়িতে ডেকে আনার পর তাকে নিশ্চয় জিজ্ঞাসা করেন না, কবে তিনি চলে যাবেন। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, আমরা অপেক্ষা করব এবং দেখব কী হয়। অন্য কোথাও যাওয়ার আগে তিনি কতদিন এখানে থাকতে চান, সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। অন্য কোনো দেশে যাওয়ার আগে তাকে অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে হবে। ভিসাসহ আরও অন্য অনেক জটিলতা আছে। আপাতত, তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন এবং আমাদের এ বিষয়টি নিয়ে গর্বিত হওয়া উচিৎ যে যখন আমাদের বন্ধু বিপদে পড়েছিলেন, তখন আমরা তার পাশে ছিলাম।
বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ নয় জানিয়ে বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করা আমাদের মৌলিক চাহিদার মতো। আমাদের সবচেয়ে প্রাধান্যের বিষয় হলো বাংলাদেশি নাগরিকদের মঙ্গল যাতে হয়, সে দিকে নজর দেওয়া। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে রাষ্ট্র এবং সুনির্দিষ্ট কোনো নেতা।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণের পাশেই আছি। যেমনটা আমরা ছিলাম ১৯৭১ সালে। আমরা ভালো-মন্দ সব সময়েই তাদের সঙ্গে ছিলাম। এমনকি, যখন তাদের সরকার আমাদের প্রতি খুব একটা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেনি, তখনো আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে এসেছি এবং নিশ্চিতভাবেই, আগামীতেও এই সম্পর্কে কোনো অবনতি হবে না।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন এই সরকার নয়াদিল্লির জন্য উদ্বেগের কারণ নয়। আমি মুহাম্মদ ইউনূসকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি, তিনি একজন অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। আমার জানা মতে, তিনি জামায়াতে ইসলামী বা পাকিস্তানি আইএসআইয়ের চেয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখেন। আপনি যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামগ্রিক গঠনের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন ভারতের সঙ্গে শত্রুভাবাপন্ন, এমন কোনো দেশের তকমা এই সরকারের ওপর পড়ার কারণ নেই।
তিনি বলেন, ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগ সর্বদাই পাকিস্তান ও চীন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবে কি না। এই ধরণের প্রেক্ষাপটে সম্ভাবনা থাকে যে অস্থিতিশীল পরিবেশে পাকিস্তানের আইএসআই সহিংসতা ছড়াবে বা উসকানি দেবে। অথবা বাংলাদেশে চীন তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চাবে।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে ভারত সরকারের উদ্বেগ আরও জোরদার করা উচিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পরস্পরবিরোধী প্রতিবেদন আসছে। অবশ্যই কিছু হামলা হয়েছে, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না, কারোরই অস্বীকার করা উচিত নয়। এটা একটা সত্য। একই সঙ্গে, সন্দেহ নেই যে এমন গল্পও বেরিয়ে আসছে যে বাংলাদেশি মুসলমানরা হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দির পাহারা দিচ্ছে, তাই সমস্ত খারাপ খবরের সময়ও কিছুটা ভাল খবর রয়েছে, বলেন তিনি।