বাংলাদেশে সাংবাদিকদের নির্ভয়ে কাজ করার পরিবেশ বজায় রাখার তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। বলেছে, বিচারিক প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হলে সংবাদকর্মীদের জন্য পক্ষপাতহীন আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তত দু’জন সাংবাদিকের গ্রেফতার ও আসামি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শত শত মামলায় এখন পর্যন্ত আসামি হয়েছেন অর্ধ লক্ষাধিক ব্যক্তি। সাবেক মন্ত্রী, বিচারপতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন স্তর, প্রশাসন, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক, খেলোয়াড়, শিল্পী ও আওয়ামী লীগের সব স্তরে নেতাকর্মীরা এখন আসামি হচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর্যন্ত ছাত্র-জনতার ওপর ‘অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ’ ও ‘গুলি করে হতাহতের ঘটনা’র তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। বিচারিক প্রক্রিয়ায় আইনগতভাবে তাদের অধিকার যেন প্রতিপালন হয়, সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ভাষ্য জানতে চাইলে একজন মুখপাত্র লিখিত বিবৃতিতে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওই মুখপাত্র বলেন, সাবেক কর্মকর্তা ও সাংবাদিকসহ সবার জন্য নিরপেক্ষ বিচারের নিশ্চয়তা চেয়ে আমরা ন্যায় ও পক্ষপাতহীন আইনি প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করছি।
তিনি বলেন, বিশেষ করে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে প্রতিশোধপরায়ণতার শিকার হওয়া এড়াতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ বিচারপ্রাপ্তি ও তাদের প্রাপ্য সম্ভাব্য সব সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।
দুটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে আছেন সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রূপা। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে প্রচার চালনোর অভিযোগ করে আসছেন বিরোধীরা। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর তারা চাকরি হারান এবং গ্রেফতার হন।
এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেই অর্ধ শতাধিক মামলা হয়েছে। তার ‘দোসর’ হিসেবে বর্ণনা করে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের শরিক দলের নেতাদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতারদের অনেককে আদালতে তোলা হচ্ছে, রিমান্ডে দেওয়া হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে জনরোষের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছেন আসামিরা। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলারও খবর রয়েছে।
এবিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস, আমরা তাকে স্বাগত জানিয়েছি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকারে রাখায় আমরা অনুপ্রাণিত।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি অনেক পুলিশ থানায় ফিরেছেন এবং সেনাবাহিনী তাদের সহযোগিতা করছে। আগেই বলেছি, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আমরা কাজ করতে প্রস্তুত। এই সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, ঐক্য ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের রূপরেখা নিয়ে কাজ করছে।