বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক হতে হবে সহনশীল

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-09-02 21:41:48

বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক হতে হবে সহনশীল পর্যায়ে বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক হাইকমিশনার এবং সচিবেরা। এজন্য তারা বাংলাদেশের সঙ্গে ফের সম্পর্ক উন্নয়নের কৌশলপত্র (রোডম্যাপ) তৈরি করেছেন। সে কৌশলপত্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের কাছে হস্তান্তরও করেছেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিবিদ এবং সচিবরা মিলে এ কৌশলপত্র তৈরি করেন।

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করে।

খবরে বলা হয়, রোববার (১ সেপ্টেম্বর) কৌশলপত্র প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক কূটনীতিবিদ এবং সচিবরা নিজেদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য এক্সপ্রেস টিবিউনকে এ তথ্য জানান।

তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফে আমন্ত্রণে একটি বৈঠক অংশ নেন তারা। সে বৈঠকের সুপারিশ মতে তারা সবাই মিলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের একটি কৌশলপত্র তৈরি করেন।

তারা জানান, ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে পাকিস্তানের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে এসে পৌঁছায়। পাকিস্তান বেশ কয়েকবার ঢাকার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করে কিন্তু হাসিনার কারণে সে প্রচেষ্টা সফলতার মুখ দেখেনি।

বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে ভারতের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। তিনি প্রায়ই পাকিস্তানের বিষয়ে দিল্লির সঙ্গে আলোচনা করতেন। তার দেশত্যাগের ফলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটাই এখন সুযোগ বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কোন্নয়নের।

সাবেক হাইকমিশনাররা এবং সচিবরা শেহবাজ শরিফকে পরামর্শ দিয়েছেন, পাকিস্তান এখন বাংলাদেশের সঙ্গে অবশ্যই সম্পর্ক উন্নয়নে অগ্রসর হতে পারে, তবে তা হতে হবে খুবই সতর্কতা এবং কৌশলের সঙ্গে।

কৌশল কেমন হতে পারে:

কৌশল কেমন হতে পারে সে বিষয়ে তারা জানান, সেটি হতে হবে খুবই সাধারণভাবে। কোনো পক্ষের পক্ষে অবস্থান করা যাবে না। কারণ হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ খুবই স্বাধীনচেতা মনোভাবাপন্ন।

শেখ হাসিনার পতনের কারণ সম্পর্কে পাকিস্তানি নেতারা বলেন, তিনি ছিলেন ভারতের পুতুল। সে কারণে ভারতকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক আমলা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ খুবই স্বাধীন মনোভাবাপন্ন। তারা কোনো দেশের সঙ্গে একেবারে দহরম মহরম পছন্দ করেন না। সে কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি ভারতের চোখ দিয়ে দেখা ঠিক হবে না। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত যেরকম সম্পর্ক রেখে চলেছে, সেরকম সম্পর্ক পাকিস্তানেরও করা উচিত হবে না।

তারা আরও বলেন, পাকিস্তানে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা বাংলা ভাষায় বেশ দক্ষ। ৭৮ বছর বয়েসি মুনির আকরাম যদি জাতিসংঘে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হতে পারেন, তাহলে ঢাকায় কেন আমরা তেমন কাউকে নিয়োগ করতে পারবো না!

এ প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত এক আমলা বলেন, অবশ্যই পরিবর্তন হতে হবে। আমরা ঢাকাকে একটি কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। তার মানে সেখানে একজন যোগ্য কমিশনার পদ থাকতেই পারে।

প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ঢাকার সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছেন। বহু বছর পর বাংলাদেশের সঙ্গে এটাই ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ের মধ্যে যোগাযোগ। এছাড়া ওআইসি সম্মেলনে সাইডলাইনে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবরা সাক্ষাৎ করেছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর