পশ্চিম তীর ও গাজায় রক্তপাতের অবসানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতায় অবিলম্বে গাজা যুদ্ধ অবসানে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া তার কথায় পশ্চিম তীর, জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ, অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপন, লেবানন ইস্যুর মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে।
গাজায় যুদ্ধ সম্পর্কে মাহমুদ আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিন আমাদের মাতৃভূমি। এটা আমাদের বাপ-দাদার জমি। এটা আমাদেরই থাকবে। ইসরায়েল সম্পূর্ণভাবে গাজা ভূখণ্ড পুনরায় দখল করেছে। এটি প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই গাজা এখন আর বসবাসের উপযুক্ত নয়। আমরা গাজার এক ইঞ্চি জায়গায়ও নিতে দেব না। খবর- রয়টার্স।
জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে তিনি আরও বলেন, এই অপরাধ থামান। এখনই থামান। শিশু ও নারী হত্যা বন্ধ করুন। গণহত্যা বন্ধ করুন। ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করুন। এই উন্মাদনা চলতে পারে না। গাজা এবং পশ্চিম তীরে আমাদের জনগণের সাথে যা ঘটছে, তার জন্য পুরো বিশ্ব দায়ী।
মাহমুদ আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে অবশ্যই গাজা উপত্যকায় তার দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে এবং সীমান্ত চেকপয়েন্ট, বিশেষ করে রাফাহ আন্তর্জাতিক সীমান্ত সহ এর উপর তার সম্পূর্ণ ম্যান্ডেট এবং এখতিয়ার আরোপ করতে হবে।
জাতিসংঘের সদস্যপদ নিয়ে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের একমাত্র সদস্য যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দেয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। আমেরিকার চোখে আমরা সদস্যপদ পাওয়ার যোগ্য নই। আমাদের কী অভাব আছে, তোমাদের সঙ্গে বসার জন্য? আমাদের জমি আছে। আমাদের কর্তৃত্ব আছে। আমাদের মানুষ আছে। আমাদের সংস্কৃতি আছে। আমাদের জ্ঞান আছে। আমাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু আছে। আমরা তোমাদের কাছে সাহায্য চাই।
তিনি বলেন, ওয়াশিংটন গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে কূটনৈতিক আচ্ছাদন দিচ্ছে এবং অস্ত্র সরবরাহ করে চলেছে। ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজায় বর্তমানে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৪১ হাজার ৫৩৪ জনে পৌঁছেছে বলে উপত্যকার হামাস নিয়ন্ত্রিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এছাড়া ভাষণে লেবাননে ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানান মাহমুদ আব্বাস। বলেন, লেবাননের মানুষ গণহত্যার শিকার হচ্ছে। আমরা এই আগ্রাসনের নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে এটি বন্ধ করার দাবি জানাই।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বার বার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো সত্ত্বেও গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজায় প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।