নানা বাধা কাটিয়ে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে ইলিশ রফতানি শুরু হয়েছে। প্রথম চালানে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ১০টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রফতানি হয়েছে ৫৪ টন ইলিশ। যার প্রতি কেজি রফতানি মূল্য ১০ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৯৫ টাকা।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে কলকাতার বিভিন্ন বাজারে পদ্মার রূপালি ইলিশ বিক্রি শুরু হয়েছে।
আনন্দবাজার অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল থেকেই হাওড়ার পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশের রূপালি ইলিশ। কেজি প্রতি ১৪৫০ থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে এই ইলিশের দাম। তবে যোগান এবং চাহিদার ওপরে এই দাম ওঠানামা করতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতে মোট ৫৪ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি হয়েছে। শুক্রবার আরও কিছু ইলিশ দেশটিতে ঢুকতে পারে।
দুর্গাপূজার আগে বাজারে পদ্মার ইলিশ আসায় খুশি কলকাতার ব্যবসায়ীরা। তবে এই মাছের দাম কতটা মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে, তা নিয়ে সংশয়ে বিক্রেতারা।
হাওড়ার স্থানীয় একটি বাজারে মাছ বিক্রি করা সুকুমার মল্লিক বলেন, পাইকারি বাজারেই ইলিশের দাম কেজি প্রতি ১৭০০ টাকা। খুচরা বাজারে দাম আরও বাড়বে। ফলে কতজন ইলিশ কিনতে আগ্রহী হবেন, বোঝা যাচ্ছে না।
কলকাতার ‘ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’র সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ বলেন, যোগান বাড়লে পূজার আগে ইলিশের দাম কমতে পারে। সে ক্ষেত্রে পূজায় মধ্যবিত্তের পাতেও পড়বে ইলিশ।
বাংলাদেশের ৪৯ জন রফতানিকারককে ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শর্ত দেওয়া হয়েছে আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করতে হবে রফতানি।
জানা যায়, রূপালি ইলিশের স্বাদ আর গন্ধ অতুলনীয়। দুই বাংলায় জনপ্রিয় মাছ এটি। বিশেষ করে পূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখে ওপারের বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রফতানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রফতানি বন্ধ করে দেয় তৎকালিন আওয়ামী লীগ সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজায় ইলিশ রফতানির সুযোগ দেয় শেখ হাসিনা সরকার।
২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায়ের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসে অন্তবর্তীকালীন সরকার। এর মধ্যেই ভারতের ব্যবসায়ীরা দুর্গাপূজায় ইলিশ আমদানির অনুরোধ জানান। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে দেশের চাহিদা মিটিয়ে পরে বিদেশে ইলিশ রফতানি হবে জানিয়েছিল বর্তমান সরকার। কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে দেড় মাসের মাথায় বৃহত্তর স্বার্থে ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতি দেয় ড. ইউনূসের সরকার। এতে রফতানি বন্ধ করতে হাইকোর্টে রিট করে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। তবে সব বাধা কাটিয়ে শুরু হয়েছে ইলিশ রফতানি।
গত বছর ইলিশ রফতানির অনুমতি ছিল ৩ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন। রফতানি হয়েছিল মাত্র ৬৬৩ মেট্রিক টন। এবছর বৃহত্তর স্বার্থে ভারতে ইলিশ রফতানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বিবিসির তথ্যমতে, বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশই ইলিশ। দেশের জিডিপিতে এটি প্রায় ১ শতাংশ অবদান রাখে। বাংলাদেশের জেলেরা বছরে ছয় লাখ টন ইলিশ ধরে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৭৬ টন ইলিশ ভারতে রফতানি হয়। এরপরের ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৯৯ টন ইলিশ রফতানি হয়। অন্যদিকে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ২৩০ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৯১ টন ইলিশ রফতানি করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০২ টন ইলিশ ভারতে রফতানি করা হয়। গত ৫ বছরে মাত্র ৫ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি হয় ভারতে।