ভোটের মাত্র দুই দিন বাকি থাকতে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস মিশিগানে তার দিন কাটিয়েছেন। এইদিন তার কর্মসূচি শুরু হয় চার্চে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে। ডেট্রয়েটে একটি চার্চে তিনি ধর্মীয় বাণী উচ্চারণ করে বলেন, ইশ্বর আমাদের জন্য ভালো পরিকল্পনাই রেখেছেন। আমাদের শুধু সঠিক কাজটি করে যেতে হবে। কমলা বলেন, একটি জাতি গঠনের জন্য আমাদের এটাই সুযোগ। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমাদের কিছু করার এটাই সুযোগ।
ওদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার যান পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা ও জর্জিয়ায়। এদিন নতুন করে আরেক বোমা ফাটিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি পেনসিলভেনিয়ায় বলেছেন, তার নাকি ২০২০ সালের নির্বাচনের পর হোয়াইট হাউস ছাড়াটাই উচিত হয়নি। তিনি বলেন, আমরা থেকে গেলে সীমান্ত সুরক্ষিত থাকতো। আর নির্বাচনে আমরাই ভালো করেছিলাম। বাইডেনের জয়ের খবরটাই মিথ্যা ছিলো। সেসময়ও ডোনাল্ড ট্রাম্প তার এমন ইচ্ছার কথা কয়েকজন ঘনিষ্ট সহকর্মীকে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বাইডেনকে তিনি হোয়াইট হাউজে ঢুকতেই দেবেন না। তিনিই থেকে যাবেন। এখন চারবছর পর এসে আবার একই কথা বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ওদিকে কমলা হ্যারিস তার রোববারের ক্যাম্পেইনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম উচ্চারণ না করে, তাকেই ইঙ্গিত করে বলেছেন, কিছু মানুষের কাজই হচ্ছে ঘৃণা বপণ করা, ভীতি ছড়ানো, আর শোরগোল সৃষ্টি করা।
রোববার কমলা হ্যারিসের পক্ষে পেনসিলভানিয়ায় ক্যাম্পেইন করেন ফার্স্টলেডি জিল বাইডেন। ফিলাডেলফিয়ার উপশহরাঞ্চলের একটি চার্চে রোববারের প্রার্থনায় যোগ দেন ফিলিগার্ল খ্যাত জিল। সেখানে তিনি সকলকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনার একটি ভোটেই নির্ধারিত হতে পারে জয় পরাজয়। আপনার ভোটেই নির্ধারিত হবে দেশের ভবিষ্যত।
ওদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহিংস কথাবার্তা যেন থামতেই চাচ্ছে না। রোববার তার আক্রমণের কেন্দ্রে ছিল মিডিয়া। তিনি বলেছেন, কেউ যদি মিথ্যা খবর যারা দেয় তাদের গুলি করে, তিনি কিছু মনে করবেন না। মিডিয়ার বিরুদ্ধে তার ধারাবাহিক বিষোদগারের এটি একটি নতুন সংযোজন। পেনসিলভানিয়ার লিটিটিজে বক্তব্য রাখছিলেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি মিডিয়ার কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের এখানেই অনেক ফেইক নিউজের কর্মীরা রয়েছে। কেউ যদি এই ফেইক নিউজওয়ালাদের গুলি করতে পারে তাহলে সে আমার মন পাবে। আর আমি তাতে কিছুই মনে করবো না।
এদিকে সবশেষ জরিপগুলোতে দুই পক্ষের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের যে চিত্র দেখাচ্ছে তাতে সুইং স্টেটগুলোর মধ্যে পেনসিলভানিয়া ও মিশিগান এখনো সমানে সমান অবস্থানে। সম্ভাব্য ভোটারের সবশেষ জনমত জরিপের ফলগুলো দেখাচ্ছে সুইং স্টেটগুলোর মধ্যে চারটিতে কমলা হ্যারিস এখন কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন। এ চারটি স্টেট হচ্ছে নেভাডা, নর্থ ক্যারোলিনা, উইসকনসিন ও জর্জিয়া। অন্যদিকে ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন অ্যারিজোনায়। সেখানে ট্রাম্পের প্রতি সম্ভাব্য ভোটারদের জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে ৪৯ শতাংশ। যেখানে কমলা হ্যারিসের অবস্থান ৪৫ শতাংশ। তবে নেভাদায় কমলা রয়েছেন ৪৯ শতাংশ জনপ্রিয়তা নিয়ে, আর ট্রাম্পের অবস্থান ৪৬ শতাংশে। নর্থ ক্যারোলিনায় হ্যারিস ৪৮ শতাংশ ট্রাম্প ৪৬ শতাংশে রয়েছেন। উইসকনসিনে এই ব্যবধান ২ শতাংশ। কমলা ৪৯ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৭ শতাংশে রয়েছেন। জর্জিয়ায় ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে ৪৭ শতাংশ, আর হ্যারিসের অবস্থান ৪৮ শতাংশে। তবে এখনো হাড্ডাহাড্ডি চলছে পেনসিলভেনিয়া ও মিশিগানে। এর মধ্যে পেনসিলভানিয়ায় দুই পক্ষের জনপ্রিয়তা ৪৮ শতাংশ করে আর মিশিগানে তা ৪৭ শতাংশ। দিনের প্রথমভাগে অবশ্য দেখা যাচ্ছিল হ্যারিসের জন্য এই হার ৪৮.২ শতাংশ। তবে তা বড় কোনো অর্থ বহন করে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন পেনসিলভানিয়াই হতে যাচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই স্টেটে ১৯টি ইলেক্টোরাল কলেজ রয়েছে, যা নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখবে। যে পক্ষে যাবে সে পক্ষই হয়তো হোয়াইট হাউজের পথে হাঁটবে। তবে তারপরেও কথা হলো মার্জিন অব এরর নিয়ে ভোটে গেলে শেষ কথা কখনোই বলা সম্ভব হয় না। কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকই এবার কোনো প্রেডিক্ট করছেন না। দেখা যাক কী পাওয়া যায় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাতে।