২০২৪ নির্বাচন ঘিরে ট্রাম্প-কমলার যত প্রতিশ্রুতি

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-11-05 15:28:55

অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ। মার্কিন জনগণ ভোটের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দমতো প্রেসিডেন্ট বেছে নেবেন। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস দুজনই এখন দাঁড়িয়ে আছেন ইতিহাসের সামনে। শেষ মূহুর্তেও সর্বোচ্চ জনসমর্থন পাওয়ার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন দুজনেই। জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

গত রোববার মিশিগানের প্রচারে কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত করার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন। সেই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে আমেরিকায় নেতৃত্বের নতুন ধারা শুরু হবে। কমলা বলেন, ‘ঈশ্বর আমাদের জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, তাকে বাস্তবে রূপায়ণ করতে গেলে আমাদের কাজ করে দেখাতে হবে। আমরা যেন সেই পরিকল্পনা মতো কাজ করি। গণতন্ত্রের জন্য, আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য আমরা যেন কাজ করি।’

তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার আমরা আমাদের জাতির ভাগ্য পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নির্ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করব। সেজন্য আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই শুধু প্রার্থনা করা যথেষ্ট নয়, শুধু কথা বলাও যথেষ্ট নয়।’

নির্বাচিত হলে প্রথম দিন থেকেই মার্কিন জনগণের জীবনযাত্রার খরচ কমানোর দিকে মনোযোগ দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কমলা হ্যারিস।

পেনসিলভেনিয়ায় দেওয়া বক্তব্যে জীবনযাপনের খরচ কমানোর অঙ্গীকার করেছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস। বক্তব্যে তিনি এ বিষয়ে তার বিস্তারিত পরিকল্পনার কথা জানান।

কমলা বলেন, ‘আমরা কর্পোরেট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর নিষিদ্ধ করব। আবাসন ও শিশুদের যত্ন সংশ্লিষ্ট খরচ আরও সাশ্রয়ী করে তুলব। আমরা শ্রমিক, মধ্যবিত্ত পরিবার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর আরোপিত কর কমিয়ে আনবো।’

‘আমরা স্বাস্থ্যসেবার খরচ কমাবো, কারণ আমি মনে করি স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া একজন মানুষের মৌলিক অধিকার। এটা শুধু আর্থিকভাবে সচ্ছলদের জন্য বিশেষ সুযোগ নয়’, যোগ করেন তিনি।

মিশিগানের ইস্ট ল্যানসিংয়ে একটি সমাবেশে প্রায় দুই লাখ আরব আমেরিকানদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি যুদ্ধে বেসামরিক হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কমলা বলেন, ‘এটা (গাজা যুদ্ধ) ধ্বংসাত্মক এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে (নির্বাচিত হলে) গাজা যুদ্ধ বন্ধে আমি আমার ক্ষমতার মধ্যে সব কিছু করব।’

যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও, ইসরায়েলের নিরাপত্তার কথাও উঠে আসে কমলার বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে, গাজার দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে, ইসরাইলের নিরাপত্তা এবং ফিলিস্তিনি জনগণ যেন তাদের মর্যাদা, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার উপলব্ধি করতে পারে; তা নিশ্চিতে কাজ করব।’

এছাড়াও কমলার নির্বাচনি প্রচারে সবচেয়ে আকর্ষণীয় অঙ্গীকার হচ্ছে গর্ভপাতের অধিকার। মূলত এই প্রতিশ্রুতির কারণেই মার্কিন নারীদের সমর্থন অনেকটা তার দিকে ঝুঁকে গেছে।

অন্যদিকে ট্রাম্পও প্রচারের শেষ দিনে জনসমর্থন অর্জনে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। গত রোববার তিনটি সমাবেশ করেন ট্রাম্প। প্রথম সমাবেশে কমলার পক্ষে অগ্রগতি দেখানোর জন্য তিনি বিভিন্ন জরিপের সমালোচনা করেন।ডেমোক্রেটিক পার্টির সমালোচনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ দলকে ‘অসুর বা দানব’ বলে অভিহিত করেন। পাশাপাশি ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নিয়েও তিনি উপহাস করেন এবং আপেলের উচ্চমূল্যের সমালোচনা করেন। এ ছাড়া ডেমোক্রেটদের সমর্থন দেওয়ার জন্য তিনি সংবাদমাধ্যমগুলোর সমালোচনাও করেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি অনুপ্রবেশ বন্ধ করে দেব। জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের সৌজন্যে বিশাল সংখ্যায় অপরাধীরা আমেরিকায় ঢুকছে।’

নির্বাচিত হলে তিনি দেশকে নতুন স্বর্ণযুগে নিয়ে যাবেন বলে জানান ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘গতবার ওরা চুরি করে নির্বাচনে জিতেছিল। এবারও ভোটিং মেশিনে জালিয়াতির মাধ্যমে জয় নিতে চায়। এজন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে।’

এ সময় সংবাদমাধ্যমগুলোকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে আবারও গুলি করা হতে পারে। আর সেই গুলি আসতে পারে ভুয়া সংবাদের মাধ্যমে। তবে, আমি এটা নিয়ে খুব বেশি কিছু মনে করব না।’

নির্বাচনে জয়ী হলে ট্রাম্প সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রাকে সাশ্রয়ী করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি তেল উৎপাদন বাড়িয়ে জ্বালানির দাম কমানোর আশ্বাস দেন।

এছাড়া গত সপ্তাহের চাকরির প্রতিবেদন নিয়ে বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই প্রতিবেদন প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘অবক্ষয়িত জাতি’। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ১৯২৯ সালের মহামন্দার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেন।

নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ট্রাম্প বলেন, নির্বাচনের ফলাফল নির্বাচনের রাতেই ঘোষণা করা উচিত। কারণ ২০২০ সালে জালিয়াতির কারণে তার পরাজয় হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তবে এবারের নির্বাচনের হারলে সেই ফলাফল মেনে নেবেন না বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, তিনি যদি ২০২৪ সালের নির্বাচনে হেরে যান, তবে এর একমাত্র যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা হবে, ডেমোক্রেটরা তার সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর