নিউজিল্যান্ডে এই ঘটনা! এটা কি করে হয়!
যারা জানছেন, শুনছেন তারাই অবাক হচ্ছেন। এত লম্বা সময় ধরে নিউজিল্যান্ডে আছেন বাংলাদেশি তরুণী স্নিগি জান্নাত, কিন্তু দুঃস্বপ্নেও কখনো ভাবেননি এমন দৃশ্য তাকে দেখতে হবে। পড়াশোনার জন্য ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ডে যান তিনি। জীবন-যাত্রা, মানুষের সরলতা, জীবিকার নিশ্চয়তা এবং সর্বোপরি নিউজিল্যান্ডের অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবকিছুতে মুগ্ধ হয়ে স্নিগি 'নিউজিল্যান্ডার' হয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বুনেন।
ক্রাইস্টচার্চের সন্ত্রাসী হামলার পর এই বাংলাদেশি তরুণীও উদ্বেগ নিয়ে ভাবছেন, 'স্বাভাবিক জীবনের নিরাপত্তা তাহলে কোথাও নেই!'
পড়াশোনার সময় থাকতেন হ্যামিল্টনে। সেই শহরে ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় স্বেচ্ছাসেবকের কাজও করেছেন। বিশ্বকাপের সেই মাঠে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সেঞ্চুরি দেখেছেন। বাংলাদেশি হিসেবে আনন্দে মেতেছিলেন। হ্যামিল্টন ছেড়ে স্নিগি চলে এসেছেন ক্রাইস্টচার্চে। এবার এখানে দেখলেন মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল, মুশফিক রহিমদের উদ্বিগ্ন চেহারা।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) শহরের যে দুটি মসজিদে সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত হামলা হয়েছে সেই মসজিদের একটি থেকে স্নিগির বাসস্থানের দূরত্ব গাড়ি পথে দশ মিনিটের রাস্তা।
ক্রাইস্টচার্চ থেকে বার্তা২৪.কমকে স্নিগি জানান এমনিতেই ক্রাইস্টচার্চের এই অংশটা খুবই শান্ত থাকে। কখনো কোন ধরনের হৈচৈ শোনা যায় না। কিন্তু শুক্রবার দুপুরে এই শহরে যা ঘটলো তাতেই নিউজিল্যান্ড সম্পর্কে বিশ্ববাসীর ধারণা বদলে গেলো!'
স্নিগি জান্নাত বলেন, 'এই হামলায় আমার পরিচিত একজন হাসপাতালের আইসিইউতে আছে। কিন্তু আমি যেতে পারছি না। নিরাপত্তার কারণে ক্রাইস্টচার্চের সেই হাসপাতালের আশপাশে কাউকে যেতে দিচ্ছে না পুলিশ। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জন মানুষ মারা গেছে। এই হামলায় তিনজন বাংলাদেশিও খুন হয়েছেন। অথচ এরা নামাজ পড়ার জন্য শহরের মসজিদে জড়ো হয়েছিলেন।'
স্বর্গ শান্তির এই শহর এই দেশ নারকীয় সন্ত্রাসের তাণ্ডবও দেখলো। নিরীহ মানুষকে হত্যার পৈশাচিক উন্মত্ততার প্রলয় ঘটলো নিউজিল্যান্ডে। রাতের রাস্তায় মাঝে সাজে মাতলামি করা ছাড়া আর কোন বড় অপরাধ সাধারণত নিউজিল্যান্ডে দেখা যেতো না। সেই দেশেই মসজিদে ঢুকে নিরপরাধ নিরস্ত্র মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মারার বিকৃত মানসিকতার খুনির দেখাও মিললো।
ঠিক যাকে বলে, ঠাণ্ডা মাথার খুন। এটা তাই। দুবছর ধরে নাকি এই খুনিরা এমন হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে আসছে। পুরো হত্যাকাণ্ডের লাইভস্ট্রিমিংই প্রমাণ করে কি ভয়াবহ ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলো এই মানসিক বিকারগ্রস্ত সন্ত্রাসীরা।
শান্তির দেশ। সুখের দেশ। সুন্দরের দেশ। সাধারণত এই নামেই পরিচিত ছিল নিউজিল্যান্ড। এখন সন্ত্রাস খুনের এই রক্তহোলি নিউজিল্যান্ডের সেই সুন্দর সেই গর্ব কালিতে ঢেকে দিলো।
নিউজিল্যান্ড মানেই এখন আলো ঝলমল শান্তির শহর নয়। বৈশ্বিক সন্ত্রাসের রক্তাক্ত নখ এই শান্তির মানচিত্রেও আঁচড় বসিয়েছে।
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের বড় কর্তা ডেভিড হোয়াইটও বুকভরা বেদনা নিয়ে বললেন 'ক্রাইস্টচার্চের এই সন্ত্রাসী হামলা আন্তর্জাতিক খেলাধুলার আয়োজন বা ক্রীড়াক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে। এটা ভয়াবহ একটা ধাক্কা। সবাই শকড! পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থার পদ্ধতি নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। আগে যেভাবে নিউজিল্যান্ডকে নিরাপদ স্বর্গ ভাবা হতো, সেই ধারণা হাওয়া মিলিয়ে গেছে।'