আন্দোলন জারি রাখার প্রত্যয়ে পর্তুগালে গণতন্ত্র দিবস উদযাপন

ইউরোপ, আন্তর্জাতিক

নাঈম হাসান পাভেল পর্তুগাল (লিসবন) থেকে | 2023-08-30 10:11:15

সবার হাতে ক্রাভো ফুল। শিশু থেকে তরুণ, বৃদ্ধ সবার মুখে মুক্তির শ্লোগান আর আনন্দের শ্লোগান। এদিন যেমনটা স্বৈরাচার মুক্তি আর পরাধীন জীবনের লাভের আনন্দ, তেমনি পরাধীনতার পরও রয়ে যাওয়া নানান অসঙ্গতির বিরুদ্ধে রাস্তায় এসে আওয়াজ তোলার দিন। ২৫ এপ্রিল পর্তুগালের আনন্দের দিন, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র লাভের দিন। তাই এদিন পর্তুগিজদের অন্যতম জাতীয় উদযাপনের দিন।

প্রতিবছর এই দিনে দিবসটি উদযাপনে লিসবনের মার্কেশ পম্বাল চত্বর থেকে একটি আনন্দ র‍্যালি প্রথাগতভাবে অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালিটি ঐতিহাসিক এভিনিধা দ্যা লিবরেদাদ সড়ক প্রদক্ষিণ করে রোসিও চত্বরে জড়ো হয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে সমবেত হয় সমাজের সব শ্রেণী পেশার মানুষ।

২৫ এপ্রিল পর্তুগালের গণতন্ত্র দিবস (দিয়া দ্যা লিবরেদাদ) অথবা কার্নেশন বিপ্লব নামেও পরিচিত। ১৯৭৪ সালের এই দিনে লিসবনে সেনা অভ্যুত্থান হয় যা কর্তৃত্ববাদী এস্তাদো নভো শাসনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছিল।

পর্তুগিজ মুভিটিও দাস ফোরাস আর্মাদাস, এমএফএ দ্বারা সংগঠিত সেই অভ্যুত্থান শিগগিরই একটি অবিচ্ছিন্ন, জনপ্রিয় নাগরিক প্রতিরোধ আন্দোলনে রুপ পায়। সংযুক্ত হয় সাধারণ সব শ্রেণি পেশার মানুষ। ‘বিপ্লব এস্তাদো নভো’ পর্তুগালের কর্তৃত্ববাদী শাসনের ৪৮ বছর শেষ এবং পর্তুগালের সকল ঔপনিবেশিক আফ্রিকান দেশগুলো থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক বিশেষ শাসনের অবসান ঘটে এদিন।

নাগরিক স্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, নারী অধিকার, ঔপনিবেশিক বিরোধ, সামরিক ব্যয় কমানো, আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা এবং বাক স্বাধীনতা দমনের প্রতিবাদে তৎকালীন সেই আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। সেই সঙ্গে গণতন্ত্র ও বেসামরিক শাসনের প্রতিষ্ঠা এবং ঔপনিবেশিক দেশ অ্যাঙ্গোলা, কেপ ভার্দে, গিনি বিসাউ, মোজাম্বিক এবং সাও তমে ই প্রিন্সিপে এই দেশগুলোকে স্বাধীনতা প্রদানের দাবি করা হয়েছিল।

তাই প্রতিবছর এইদিনে রাজপথে তরুণদের স্লোগানে উঠে আসে সাম্য, সমতা, স্বাধীনতা আর অধিকারের কথা। কর্মজীবী মানুষেরা এদিন রাস্তায় আসেন তাদের দাবিগুলো নিয়ে। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত থাকে শহর। জনপ্রিয় শ্লোগানের মধ্যে থাকে ‘এপ্রিল সব সময়’ ‘এপ্রিল এখনো রাস্তায়’ ‘আমাদের আন্দোলন চলমান’।

এইদিনে ক্রাভো ফুল সবার হাতে শোভা পায়। সংগ্রামের সেই সময় থেকে এই ফুল দিবসটি উদযাপনের ঐতিহ্য বহন করে। এই ফুলকে দিনটি উদযাপনের অনন্য একটি সংযোজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শিশু বৃদ্ধ সবার হাতে ক্রাভো ফুল দেখা যায়। তরুণীদের খোঁপায়ও এ ফুলটি শোভা পায়।

এই দিনে বিশেষ করে নারীরা সমবেত কণ্ঠে সেই সময়টির কথা প্রতিবাদ স্বরুপ তুলে আনেন। তাদের সেই সময়ে হরণ হওয়া অধিকারের কথা। মেয়েরা সে সময়ে অনুমতি ছাড়া বাইরে যেতে পারতো না। বাইরে কাজ করতে পারতো না।



র‍্যালিতে অংশ নেওয়া এক পর্তুগিজ নারী সোনিয়া সওজা বলেন, ‘এই দিনটি আমাদের অধিকার আদায়ের দিন, এই দিনটি ইতিহাসকে মনে করার দিন। এই দিনে সেই কালো অধ্যায়কে মনে করিয়ে দেওয়ার একটিই কারণ। এমন দিনগুলো যেন কখনো আমাদের জাতীয় জীবনে ফিরে না আসে। কারণ মানুষ ভুলে যায় অতীতের কথা। তাই ইতিহাসের স্মরণের মাধ্যমে আমরা তরুণদের নতুন অনুপ্রেরণা দিতে পারি। ’

এদিন অভিবাসীদেরও আন্দোলনে দেখা যায়। পর্তুগালে অভিবাসীদের জন্য কাজ করা সংগঠন সলিদারিটি ইমিগ্রেন্টস এদিন র‍্যালিতে অংশগ্রহণ করে। সেই সঙ্গে যোগ দেয় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন অভিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা। এছাড়া রাস্তায় র‍্যালিতে অংশগ্রহণ করে প্রায় শতাধিক সংগঠন।

২৫ এপ্রিল পর্তুগিজদের জাতীয় জীবনে একটি অনন্য দিন। ২৫ এপ্রিল আনন্দের দিন, উদযাপনের দিন। পর্তুগিজদের এদিনের শ্লোগান তাই ‘২৫ শে এপ্রিল সবসময়, আর কোনো অপশাসন নয়’।

এ সম্পর্কিত আরও খবর