রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘ মহাসচিবের ৫ সুপারিশ

, আন্তর্জাতিক

সেন্ট্রাল ডেস্ক ২ | 2023-08-25 16:28:02

রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষ থেকে পাঁচটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে সঙ্কট মোকাবেলায় মিয়ানমারকে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বিষয়গুলো তুলে ধরেন মহাসচিবের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী জেফরি ফেল্টম্যান। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের পক্ষ থেকে ফেল্টম্যান যে সুপারিশগুলো তুলে ধরেন তা হলÑ কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনকে ভিত্তি হিসেবে ধরে শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ীভাবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, বাস্তুচ্যুতদের মূল ভূমিতে বা পছন্দনীয় কাছাকাছি কোনো স্থানে প্রত্যাবাসন করা, জীবন ধারণের মৌলিক সব প্রয়োজন মেটাতে অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, প্রত্যাবাসনের যোগ্যতার ক্ষেত্রে উদার মানদ- নির্ধারণ এবং সব প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, মিয়ানমার ইস্যুতে গত ৬ নভেম্বর একটি প্রেসিডেন্সিয়াল বিবৃতি গ্রহণ করে নিরাপত্তা পরিষদ। এ বিষয়ে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবকে বিবৃতি দিতে অনুরোধ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এই বিবৃতি আসে। নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার ইস্যুতে অগ্রগতির ব্যাপারে ফেল্টম্যান বলেন, ‘আমরা আশা করছি, জাতিসংঘের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হবে মিয়ানমার।’ গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ২৬ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানান তিনি। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন ফেল্টম্যান। একইসঙ্গে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সহযোগিতা বজায় রাখারও আহ্বান জানান। মিয়ানমারকেই রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান করতে হবে বলে উল্লেখ করেন ফেল্টম্যান। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কটের উৎপত্তি হয়েছে মিয়ানমারে এবং তাদেরই এটার সমাধান করতে হবে। রাখাইন সম্প্রদায়ের মাঝে অবিশ্বাস ও ভয় দূরীকরণে বৈষম্যমূলক আইন প্রত্যাহার এবং জননিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত না করা হলে প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হবে।’ গত ২৩ নভেম্বর মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার অগ্রগতির বিষয়ে কিছু বলেননি ফেল্টম্যান। এক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকারকে বৈধভাবে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তার বিষয়টিতে জোর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ফেল্টম্যান জানান, গত অক্টোবরে মিয়ানমার সফরে তিনি জাতিসংঘের সহযোগিতার ব্যাপারে সু চি সরকারকে বিস্তারিত বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সেবামরিক ও সামরিক নেতাদের জাতিগত বিদ্বেষ এবং সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছি।’ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সংঘর্ষকালীন যৌন সহিংসতা বিষয়ক মহাসচিবের বিশেষ দূত প্রমীলা প্যাটেনও বক্তব্য দেন। গত নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরে তিনি রোহিঙ্গা নারীদের অবস্থা পরিদর্শন করেন। প্যাটেন বলেন, ‘যারা এখনো যৌন সহিংসতার ক্ষতচিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন এবং যারা নিষ্ঠুরতম এই যৌন সহিংসতার দৃশ্য নিজ চোখে দেখেছেন তারা সবাই বলেছেন, নারকীয়ভাবে মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা ধর্ষণ, গণধর্ষণ এবং সেনাক্যাম্পে আটক রেখে দিনের পর দিন যৌনদাসত্বে বাধ্য করার মত জঘন্য কাজ করেছে।’ তিনি সহিংসতার শিকার এমন অনেক নারীর উদাহরণ দেন, যাদের কেউ কেউ টানা ৪৫ দিন সেনা ক্যাম্পে ধারাবাহিক যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্যাটেন জানান, অনেক মেয়েকে তার স্বামী অথবা বাবার সামনে নগ্ন করে ধর্ষণ করা হয়েছে। অনেক মায়ের সন্তানদের গ্রামের জলকূপে ডুবিয়ে মারা হয়েছে। শিশুকে কেড়ে নিয়ে শিশুর সামনে মাকে ধর্ষণ করা হয়েছে; এবং ধর্ষণ শেষে শিশুটিকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এমনই সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা জানিয়ে প্যাটেন দ্রুততম সময়ে এই সহিংসতার সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদকে সর্বক্ষমতা প্রয়োগের আহ্বান জানান। বৈঠকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদেরও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর