সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়ে বিজ্ঞানীরা যে মত দিয়েছিলেন এটি আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হবে। নতুন এক গবেষণায় এ মত দিয়েছেন একদল বিজ্ঞানী। গ্রীনল্যান্ড ও এন্টার্কটিকার বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে ভয়াবহ পরিণতির আশঙ্কা করছেন নতুন এ গবেষকদল।
তারা বলছেন, বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আগের ভবিষ্যতবাণীকেও ছাড়িয়ে যাবে। ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বেড়ে যাবে বলে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছিল।
নতুন গবেষণা বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আগের ভবিষ্যৎবাণীর চেয়ে দ্বিগুণ হবে। এতে শত কোটি মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়বেন। ন্যাশনাল একাডেমি অব সাইন্সেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করে নতুন এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার পেংগুইন মারা যাওয়া, এন্টার্কটিকায় অস্থিরতা, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, গাছপালার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ার হার পরিমাপ বিবেচনায় তারা নতুন এ ফলাফল পেয়েছেন।
ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) ২০১৩ সালে তাদের পঞ্চম মূল্যায়ণে সমূদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এটি ছিল সে সময়ে সবচেয়ে বিতর্কিত ও আলোচিত একটি বিষয়।
সেই সময় বলা হয়েছিল পৃথিবীর তাপমাত্রা এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে এবং ক্ষতিকর গ্যাসের নির্গমনের হার কমিয়ে আনতে না পারলে ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৫২ সেন্টিমিটার থেকে ৯৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়ে যাবে। বেশি সংখ্যক বিশেষজ্ঞ সে সময়কার আনুমানিক এ ভবিষ্যৎবাণীকে মেনেও নিয়েছিলেন।
বর্তমানে বরফ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে যে হারে বরফ গলছে এবং বরফ গলার এ হার যদি অব্যাহত থাকে তাহলে পানি সমুদ্রের ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এতে স্থলভাগের বিরাট এক অংশ তলিয়ে যাবে।
বিষয়টি সম্পর্কে সত্যিকারের ধারণা পেতে বিশ্বের নামকরা বিজ্ঞানীদের একটি একটি অংশ গ্রীনল্যান্ড, পূর্ব ও পশ্চিম এন্টার্কটিকার ওপর গবেষণা চালান।
গবেষকরা মত দিয়েছেন, যদি বর্তমান হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন এ হারে চলতে থাকে তাহলে ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা ৬২ থেকে ২৩৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
গবেষক দলের প্রধান ও ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জোনাথান বামবার বলেন, আগের গবেষণায় ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৭ থেকে ১৭৮ সেন্টিমিটার বাড়ার আশঙ্কা করা হলেও এটি ছাড়িয়ে যাবে। এটি হবে দুই মিটারেরও অধিক।
২০১৩ সালের আইপিসিসির সেসময়কার রিপোর্টে বলা হয়েছিল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৭ থেকে ৮৩ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু নতুন গবেষণার ফল অনুযায়ী আনুমানিক এ হার ৫ থেকে ৯৫ শতাংশ। প্রত্যাশিত তাপমাত্রা বাড়বে ২ সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত।
একক বৃহত্তম হিসেবে গ্রীনল্যান্ডের বরফ স্তর গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে। ইতোমধ্যে এন্টার্কটিকার বরফ স্তরও গলতে শুরু করেছে।
প্রফেসর বামবার বলেন, বর্তমানে বরফ গলার হারটা কম মনে হলেও পরিসংখ্যানগভাবে এর ব্যাপকতা বিশাল। এর কারণে পশ্চিম এন্টার্কটিকা প্রাণিকূলের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়বে এবং এর মতো পূর্ব এন্টার্কটিকার একটি বৃহৎ অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থিতি পৃথিবীতে মারাত্মক জটিলতা তৈরি করবে।
গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী লিবিয়ার আয়তনের মতো ১ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন কিলোমিটার এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। বাংলাদেশের বৃহৎ একটি অংশের মানুষ তাদের বাসস্থান হারাবে।
বৈশ্বিক দিকে থেকে কৃষি জমির বিরাট এক অংশ তলিয়ে যাবে। লন্ডন, নিউ ইয়র্ক এবং সাংহাইয়ের মতো বৃহৎ শহরও এই ঝুকির মধ্যে রয়েছে। ইউরোপে বাস্তুহারা লোকের চাপ বাড়বে বলে মত দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।