আইএসের বাংলাদেশি তরুণীর অস্ট্রেলিয়ায় আজীবন কারাদণ্ড

, আন্তর্জাতিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 20:02:41

দ্যা ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়ার (আইএসআইএস) নাম দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় নিজের আশ্রয়দাতাকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে আটক বাংলাদেশি তরুণীকে আজীবন (৪২ বছর) কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির ভিক্টোরিয়া স্টেটস সুপ্রিম কোর্ট।

বুধবার (৫ জুন ) আদালত মোমেনা সোমা নামে ২৬ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশি তরুণীর বিচারের রায় দেন।

২০১৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়া বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক রজার সিঙ্গারনভেলুকে ছুরি দিয়ে হত্যার চেষ্টায় আটক হন সোমা। একই বছরের ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে তিনি অস্ট্রেলিয়া প্রবেশের পর মাত্র ৮ দিনের মাথায় এই হত্যা চেষ্টা করেন। রজার সিঙ্গারনভেলুকে রান্না ঘরের ছুরি দিয়ে ঘাড়ে আঘাত করে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি৷

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, আদালতে বিচারের রায় ঘোষণার সময় সোমা এবং বাদী রজার সিঙ্গারনভেলু উভয়ই উপস্থিত ছিলেন।

রায় ঘোষণার সময় সোমাকে উদ্দেশ্য করে বিচারক লেসলে টেইলর বলেন, 'আপনি যা ঘটিয়েছেন, বলেছেন এবং তাদেরকে (আইএসআইএস) সহযোগিতা করার প্রচেষ্টা প্রমাণিত।' আদালত ৩১ বছর এবং ৬ মাসের প্যারোল ছাড়া মোট ৪২ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন সোমাকে। আজীবন কারাদণ্ডের সর্বোচ্চ রায় তাকে প্রদান করা হয়েছে।

বিচারক সোমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'অস্ট্রেলিয়ান কমিউনিটিতে তার কার্যকলাপ মারাত্মক ভীতি সঞ্চার করে।'

'অথচ তারা (আইএসআইএস) তোমাকে শহীদ বানাতে পারেনি। তারা তোমাকে ইসলামের আদর্শের অংশ না বানিয়ে একজন ঘৃণীত অপরাধী হিসেবে তৈরি করেছেন।'

মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী জানান, সোমা যখন ঢাকায় বসবাস করতেন, সেই সময় ২০১৩ সালে আইএসআইএসের (সংক্ষেপে ইসলামিক স্টেট-আইএস) প্রতি আকৃষ্ট হন এবং জড়িয়ে পড়েন। 

সরকার পক্ষের আইনজীবী আরও জানান, সিরিয়ার আইএসআইএস অধ্যুষিত এলাকায় প্রবেশের লক্ষ্য নিয়ে তুরস্কে পড়াশোনার পরিকল্পনা করেন সোমা। তবে সেখানে ব্যর্থ হন তিনি। এরপর মেলবোর্নের লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করেন।

আদালত জানান, অস্ট্রেলিয়া প্রবেশের পর বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য, 'আবাসিক বাসস্থানে অবস্থান' প্রকল্পের অধীনে একটি স্থানীয় পরিবারের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন তিনি। একই সঙ্গে ওই পরিবারের ওপর হামলার ছক আঁকতে থাকেন।

তিনি ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে অন্ধকারে দেখার জন্য বিশেষ চশমা কেনেন। ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখে ওই দম্পতি বাসায় ছিলেন না। এই সময়টায় আশ্রয়দাতা পরিবারের কিছু জিনিসে বারবার আঘাত করে আক্রমণের রিহার্সেল করেন সোমা।

পরিবারটি বাসায় ফিরলে তাদের চোখে এই ধরনের কিছু বিষয় ধরা পড়ে এবং তারা শিক্ষার্থীদের বাসস্থান প্রকল্পের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সোমাকে সরিয়ে নেয়ার জন্য বলেন৷

আদালত জানান, অনলাইনে আইএসআইএসের ভিডিও দেখার তিনদিন পরে ৯ ফেব্রুয়ারি রজার সিঙ্গারনভেলুকে আক্রমণ করেন তিনি এবং ছুরি দিয়ে হামলা চালান। তবে কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

রজার সিঙ্গারনভেলু মালয়েশিয়া ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন। আদালতের বাইরে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, এই ধরনের আঘাতের পরও তার নিজের বেঁচে থাকাটা বিস্ময়! এছাড়াও সোমা কীভাবে অস্ট্রেলিয়া প্রবেশের ভিসা পেলেন সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আমরা মালয়েশিয়া থেকে আরেকটু ভালো জীবনযাপন এবং শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য অস্ট্রেলিয়া এসেছি। তিনি (সোমা) অনেক দেশে বিপদজনক হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরও কীভাবে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের অনুমোদন পান?'

এ সম্পর্কিত আরও খবর