রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি নিয়ে সু চির কৌশলী বক্তব্য

, আন্তর্জাতিক

সেন্ট্রাল ডেস্ক ২ | 2023-08-30 14:50:53

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে শিগগিরই বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আশার কথা বললেও বেশ কিছু বিষয় অস্পষ্ট  রেখেছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। একইসঙ্গে রাখাইনে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিলম্ব ও সেনাবাহিনীকে দায়মুক্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী এ নেত্রী। নেইপিদোতে আসেম সম্মেলনের শেষে গতকাল মঙ্গলবার দেওয়া এক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। এশিয়া ও ইউরোপের ৫১ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুটি জোরালোভাবে উপস্থাপিত হয়। আসেম সম্মেলনের প্রথম দিন সোমবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো কথা না বললেও বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বারবার বিষয়টি তুলে ধরায় মঙ্গলবার এ ব্যাপারে বক্তব্য দেন সু চি। রয়টার্র্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিদোতে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সু চি। আজ বুধবার ও কাল বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সু চি। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি দ্রুত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এর মাধ্যমে আমরা সীমান্ত পার হওয়াদের নিরাপদ ও ঐচ্ছিক প্রত্যাবাসন শুরু করতে পারব।’ তবে চুক্তি হওয়া মানে রোহিঙ্গাদের নাগরিত্ব স্বীকার করা নয়Ñ সেটি আবারো উচ্চারণ করেন সু চি। একইসঙ্গে ১৯৯২ সালে করা চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা হবে বলে জানান তিনি। সু চি বলেন, ‘এটা শুধু আবাসনের বিষয়। দুই দেশের (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) সরকার অনেক দিন আগে এ বিষয়ে চুক্তি করেছিল। ওই চুক্তি অনুসারেই কাজ করা হবে।’ এর আগে বৈদেশিক সাহায্য পাওয়ার আশায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ বিলম্ব করছে বলে অভিযোগ করেছিল মিয়ানমার। প্রায় একই সুর তুললেন সু চিও। তার মতে, দুই দেশ চুক্তি করার ব্যাপারে ঠিক কতটা কাছাকাছি বিষয়টি স্পষ্ট নয়। রোহিঙ্গা মুসলিমদের শুধু প্রত্যাবাসনই নয়, রাখাইন রাজ্যে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যাপারেও জোর দিয়েছেন বিশ্বনেতারা। এ ব্যাপারে সু চি বলেন, ‘রাখাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাদের সরকার সব ধরনের চেষ্টা করবে।’ তবে রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানে অনেক সময় লাগবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চালানো মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনকে যুদ্ধাপরাধের শামিল বলে উল্লেখ করেছে। জাতিসংঘ এটিকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে উল্লেখ করে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। তবে দেশটির সেনাবাহিনী তাদের প্রতিবেদনে নিজেদের ‘নিষ্কলুষ’ দাবি করেছে। এরপর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের আহ্বান জানায়। তবে সেনাবাহিনীর অত্যাচারের স্বাধীন তদন্তের ব্যাপারে উদ্যোগ না নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন সু চি। তিনি বলেন, ‘আমরা বলব না এটা (যুদ্ধাপরাধ) হয়েছে বা হয়নি। তবে সরকারের দায়িত্বশীল হিসেবে বলছি, এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করব।’ রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নতুন অভিযানে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এই ঘটনার পর এ পর্যন্ত সোয়া ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বিতারিত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা নিজ বাসভূমিতে ফিরতে পারবে কিনাÑ তা এখনও নিশ্চিত নয়। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করে না। দেশটিতে তারা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। এমনকি তাদের ‘রোহিঙ্গা’ নয়, ‘বাঙালি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নতুন করে মিয়ানমারে ফিরতে হলে রোহিঙ্গাদের পর্যাপ্ত কাগজপত্র দেখাতে হবে। যা অনেকের কাছেই এখন নেই। এমনকি বিতারিত রোহিঙ্গাদের ফসলও কেটে নিয়েছে দেশটির সরকার। এরই মাঝে রোববার আসেম সম্মেলনে ‘অবৈধ অভিবাসীদের বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি’ বলে উল্লেখ করেছেন সু চি। বিষয়টি রোহিঙ্গা মুসলিমদের ইঙ্গিত করেই বলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সু চির এই বক্তব্যের পর অনেক রোহিঙ্গাই তাদের ওপর আরো অত্যাচারের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর