হাড়ের বিরল রোগ নিয়েও হয়েছেন প্রতিষ্ঠিত মেকআপ আর্টিস্ট

আমেরিকা, আন্তর্জাতিক

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-12-27 20:05:56

ফ্যাশন সচেতনতার এ সময়ে মেকআপ আর্টিস্টের অভাব নেই। একেকজন মেকআপ আর্টিস্ট একেকজনের চাইতে দক্ষ, অভিজ্ঞ। আজকের গল্পটাও একজন মেকআপ আর্টিস্টের, তবে তিনি খুব সাধারণ কেউ নন। বিশেষ একজন, ব্যতিক্রম একজন।

গল্পটা পুয়ের্ত রিকোর পনসে জন্ম নেওয়া ক্যারি ভেলাজকুয়েজের। আর দশজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ মতো ছিল না তার বেড়ে ওঠা, তার জীবনের প্রবাহ। ছোট্ট ফুটফুটে ক্যারির মাত্র তিন দিন বয়সে ধরা পরে অস্টিওজেনেসিস ইমপারফেক্টা (Osteogenesis Imperfecta). বিরল এই রোগটি সাধারণত ‘হাড়ের ভঙ্গুর রোগ’ নামেই লোকমুখে বেশি পরিচিত। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাড় এতো বেশি হালকা-পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে থাকে যে, শুধুমাত্র দমকা বাতাসের তোড়েও হাড় ভেঙে যেতে পারে!

বুঝতেই পারছেন, একদম ছোট থেকে ক্যারির জন্য জীবনটা সুখকর ছিল না মোটেও। হাড়ের এহেন দশায় শরীরে উচ্চতাও বৃদ্ধি পায়নি। স্বাভাবিকভাবে হাঁটা, চলাফেরা করাও ক্যারির জন্য অসম্ভব। হুইল চেয়ারে বন্দী ক্যারির সময় কেটেছে, তার জীবনের অর্থ খুঁজে পেতেই। হ্যাঁ, একটা সময়ে এসে ক্যারি ঠিকই তার জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছে। খুঁজে পেয়েছে তার প্যাশন।

ক্যারি সবসময়ই ইউটিউবে মেকআপ ভিডিওগুলো দেখতে ভালোবাসতেন। প্রথম প্রথম তার মাথা আসেনি, এই মেকআপ নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন তিনি। কিন্তু একটা সময় পর এই ভিডিওগুলো থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে মেকআপ পণ্যের দিকে হাত বাড়ান তিনি।

ভিডিও থেকে শেখা পদ্ধতিগুলো প্রথমে নিজের উপরে প্রয়োগ করা শুরু করলেন। মেকআপ করার হাত যখন কিছুটা ভালো হলো তখন মা ও বোনদের সাজানো শুরু করলেন।

মা ও বোনরাও খেয়াল করলো একজন মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে ক্যারি বেশ সাবলীল। ভঙ্গুর হাড় ও আঁকা বাঁকা হাতে ব্রাশ ধরে স্বাচ্ছন্দে মেকআপ করে দিতে পারেন তিনি। সময় গড়ালে এভাবেই একজন প্রফেশনাল মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে নিজের পরিচিত গড়ে তোলেন ক্যারি। ইন্সটাগ্রামে নিজের আইডিতেও অহরহ শেয়ার করেন নিজের ছবি, তার হাতে সাজানো মডেলদের ছবি।

২৯ বছর বয়সী ক্যারি নিজের কাজ নিয়ে ভীষণ খুশি। যারা তার কাছ থেকে মেকআপ করিয়েছেন, তারাও দারুণ সন্তুষ্ট ক্যারির মেকআপ সার্ভিস নিয়ে। একজন দক্ষ মেকআপ আর্টিস্টের সাথে ক্যারির কাজের মাঝে কোন পার্থক্যই নেই।

নিজের দক্ষতা, চমৎকার আত্মবিশ্বাস, পরিবারের সমর্থন, বন্ধুদের সহযোগিতা থাকা সত্বেও প্রায়শ মন খারাপ করতে হয় ক্যারিকে। স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্যারি বলেন, ‘এখনও আমি প্রচুর নেতিবাচক কমেন্ট পাই আমার বাহ্যিক গঠনের জন্য। আমি দেখতে খারাপ, আমার মাথা অনেক বড় কিংবা আমাকে দেখতে সঙয়ের মতো লাগে। এমন সব কথা। কিন্তু প্রতিবারই আমি এইসব কথাকে ভুল প্রমাণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই।’

বিগত তিন বছর ধরে মেকআপ নিয়ে কাজ করে চলা ক্যারি ইতোমধ্যে তার কাজের জন্য কুড়িয়েছে সুখ্যাতি। নিজের শারীরিক অবস্থা, মানুষের নেতিবাচক মন্তব্য কোনকিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। আর সে কারণেই, ক্যারি হয়ে উঠেছেন অনেকের অনুপ্রেরণার উৎস।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর