মিয়ানমারে বাঘ বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়েছে

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-31 15:30:23

জঙ্গলে বাঘের খাবার সংকট, অবৈধ বন্যপ্রাণীর বাজার, সংকুচিত আবাসস্থল ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের কারণে মিয়ানমারে বাঘ বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশটিতে সাধারণত ইন্দোচায়না ও বেঙ্গল টাইগার দেখতে পাওয়া যায়। 

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড প্রকল্পের পরিচালক ম্যানেজার ইউ পিং সো বলেন, বাঘ জঙ্গলে তাদের শিকারের জায়গাগুলোতে পশুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে বন রক্ষা করে থাকে। এর ফলে বনের ইকোসিস্টেম বজায় থাকে।

বাঘের সংখ্যা কমে গেলে বনের উপর নির্ভরশীল মানুষের জীবনযাত্রা প্রভাবিত হয়। বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেলে বনের অন্যান্য প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং বনাঞ্চলের ইকোসিস্টেম বিঘ্নিত হবে।

মিয়ানমারকে অবশ্যই বাঘের বংশবৃদ্ধি ও সংরক্ষণের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এই সংকট সমাধানে স্থানীয় সম্প্রদায়েরও সহযোগিতা প্রয়োজন।

মিয়ানমারে বাঘকে জীব বৈচিত্র্য এবং নিরাপদ অঞ্চল আইনের অধীনে সুরক্ষিত করা হয়েছে। যেখানে আইন মোতাবেক বাঘ শিকার, হত্যা, আহত, সংগ্রহ ও ব্যবসায়ের অভিযোগে দণ্ডিতরা তিন থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করবে।

এদিকে মিয়ানমারসহ এশিয়াতে বাঘ পাচারকারীদের একটি বড় কালোবাজার রয়েছে বলে জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম সম্পর্কিত সংস্থাটি জানিয়েছে (ইউএনওসি)।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে বাঘ পাচারকারী অধিকাংশ কালোবাজারিরা লাওস, মিয়ানমার এবং ভিয়েতনাম হয়ে অবৈধভাবে চীনের গ্রাহকদের কাছে পাচার করে থাকে। বাঘের চামড়া, হাড়, মাংস দিয়ে অলঙ্কার ও ঐতিহ্যবাহী ওষুধের তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে বাঘের দেহের অন্যান্য অংশ এবং হাড় দিয়ে তৈরি ওষুধ পুরুষের জন্য টনিক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে ৩২০০ থেকে ৩৯০০ হাজার বাঘ রয়েছে। যেখানে গত শতকে বাঘের সংখ্যা লাখের ওপর ছিল। বর্তমানে জঙ্গলের চেয়ে খাঁচায় বাঘের সংখ্যা বেশি রয়েছে। চীন, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং আফ্রিকান দেশগুলিতে ৭ হাজারেরও বেশি বাঘের প্রজনন কেন্দ্রে লালিত পালিত হচ্ছে। এ সকল কেন্দ্র থেকে বেশিরভাগ বাঘজাত পণ্য বাজারে বিক্রি করা হয়। বাজারে প্রায় ৩০ শতাংশ বাঘজাত পণ্য বনের বাঘ থেকে আসে। 

১৯৯৯-২০০২ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় বাঘ শুমারি অনুসারে মিয়ানমারে বেঙ্গল টাইগার এবং ইন্দো-চায়না টাইগার খোঁজ পাওয়া যায়।

মিয়ানমারজুড়ে চলমান সশস্ত্র সংঘর্ষের ফলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাঘ যে অঞ্চলে বাস করে সেখানকার মাত্র ১০ শতাংশ জরিপ করে মিয়ানমারের বন্যজীবন সংরক্ষণ সোসাইটির মুখপাত্র ইউ হলা নাইং বলেন, আমরা ক্যামেরার রেকর্ডের ভিত্তিতে মাত্র ২০টি বাঘ সনাক্ত করতে পেরেছি। বাঘগুলি মূলত উত্তর মিয়ানমারের উপরের দিকে সিন্ডউইন নদীর অববাহিকা এবং দক্ষিণে দাওয়ানা-তানিনথারি রেঞ্জে বাস করে। তবে বাঘের আবাসস্থল এবং নিরাপত্তা প্রশ্নে বাঘশুমারি করতে যাওয়া কর্মীদের পক্ষে তাদের কাজ পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

ইউ হলা নাইং বলেন, আমরা কিছু জায়গায় যেতে পারি তবে সবটাতে নয়। বাঘের বিলুপ্তি এড়াতে আমরা যে জায়গাগুলিতে ঢুকতে পারছি শুধু সেই জায়গাগুলোতে বাঘের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা আমরা করতে পারি। এছাড়াও, বন্য প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে জঙ্গল সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর