মিয়ানমার আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-31 19:50:16

রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ রয়েছে স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মুখপাত্র ইউ জাও এইচটি বলেছেন, লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম নিজ বাসভুমি ছেড়ে পাশের দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তার জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র সমালোচনা ও চাপ রয়েছে। তবে সরকার সশস্ত্র নৃগোষ্ঠীর রাখাইন রাজ্যের উত্তর জোটের রাজনৈতিক দাবির বিষয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গেও আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

শুক্রবার ( ২ আগস্ট) নেপিদিতে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব স্বীকার করেন তিনি।

তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার বলতে বাধ্য হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাত মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক উত্তরণকে প্রভাবিত করেছে। রাখাইন সংকট গণতন্ত্র উত্তরণে বহিঃবিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।

সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসাবে বিবেচনা করা উচিত বা তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার  প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ।

মিয়ানমার গণমাধ্যম বলছে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ যে বক্তব্য ছিল তার প্রতিক্রিয়ায় এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল।

ওই বক্তব্যে মাহাথির রাখাইন মুসলমানরা ‘গণহত্যার মুখোমুখি হয়েছে’ জানিয়ে বলেছিলেন, মিয়ানমার কখনই একটি দেশ ছিল না। মিয়ানমার এক সময়ের অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য নিয়ে গঠিত হয়েছে। ব্রিটিশরা এসে মিয়ানমারকে একটি রাষ্ট্র হিসাবে শাসন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ কারণেই, অনেক উপজাতি মিয়ানমারে (বার্মা) অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। তবে এখন সময় এসেছে রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু ভাবার। রোহিঙ্গাদের এখন অবশ্যই তাদের নাগরিক হিসাবে বিবেচনা করা উচিত, অথবা তাদের নিজস্ব রাজ্য গঠনের জন্য তাদের আলাদা অঞ্চল দেওয়া উচিত। ২০১৭ সালে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রাখাইন রাজ্য থেকে ৭ লাখেরও বেশি মুসলিম রোহিঙ্গাকে নিজ দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলেছে এ রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা এবং গণধর্ষণের মত যুদ্ধাপরাধ করা হয়েছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মুখপাত্র ইউ জাও এইচটি নিজেদের পক্ষ সমর্থন করে বলেন, রাখাইন রাজ্যে যা ঘটেছে তার সূত্রপাত হয়েছে যখন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি ২০১৭ সালের আগস্টে সুরক্ষা ফাঁড়িগুলিতে আক্রমণ করেছিল। এতে রাখাইন রাজ্যের শান্তি ও উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি আবারও আক্রমণ করেছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারে গণতন্ত্রে উত্তরণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে এদেশে সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠী এবং রাখাইনের মতো সমস্যা সরকারকে একটি শক্ত অবস্থানে ফেলেছে। এটি সত্য যে আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা কঠিন এবং আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। গণতন্ত্র এমন একটি প্রক্রিয়া যা বহু বছরের প্রয়োজন এবং মিয়ানমারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে এটি আরও কঠিন হতে পারে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে মিয়ানমারের নিজস্ব পদ্ধতিতে প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া দরকার। আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। তবে আমরা ধীরে ধীরে অগ্রগতি করছি।

ইউ জাও এইচটি বলেন, রাখাইনে সংঘর্ষের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের দেশে ফেরত আনার  প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।   মিয়ানমারের পররাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী সচিব ইউ মিন্ট থু-র নেতৃত্বে একটি দল ২৭-২৮ জুলাই  বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছে। বলা যেতে পারে যে এই সফরটি সফল হয়েছিল কারণ এই শরণার্থীদের সঙ্গে তারা দেখা করতে এবং  মিয়ানমার যে প্রত্যাবাসনে রাজি তা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়  সশস্ত্র নৃগোষ্ঠীর জোট উত্তর জোটের রাজনৈতিক দাবির বিষয়ে সরকার আরাকান আর্মির সঙ্গেও আলোচনার জন্য প্রস্তুত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর