এখনকার সময়ের বেশিরভাগ শিশু-কিশোরদের প্রিয় খাবার হলো ফাস্ট ফুড ও প্যাকেটজাত খাবার। ইন্টারনেট ও প্রকাশিত খবরের কল্যানে এটা সকলের জানা, এ সকল খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। অল্প বয়সে ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অপুষ্টিসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে এমন খাদ্যাভ্যাসের ফলে।
কিন্তু ফ্রেন্স ফ্রাই, চিপস, সাদা পাউরুটি, সসেজ ও হ্যাম ব্যতীত স্বাস্থ্যকর কোন খাবার গ্রহণ না করার ফলে অন্ধত্ব বরণ করতে হলো মার্কিন যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলে বসবসকারি ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে। প্রাথমিক স্কুল পাস করার পর থেকেই কিশোরটি শুধুমাত্র এই কয়টি খাবারই গ্রহণ করতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কিশোরের অন্ধত্বের কারণ জানার জন্য পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তার শরীরে বেশ কিছু ভিটামিনের অভাব ও পুষ্টিহীনতাজনিত ক্ষতি হয়েছিল।
অন্ধ হওয়া এই কিশোর ১৪ বছর বয়স থেকেই সবসময় ক্লান্ত ও অসুস্থ বোধ করতো। সে সময় পরীক্ষা করে তার শরীরে ভিটামিন-বি১২ এর অভাব পাওয়া যায় এবং তাকে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। কিন্তু সে ওষুধ গ্রহণে নিয়মিত ছিল না এবং কখনোই স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের জন্য চেষ্টা করেনি।
সে ঘটনার তিন বছর পর এসে ব্রিস্টল আই হসপিটাল তার অন্ধত্ব ঘোষণা করে। কিশোরের চিকিৎসক ডিনাইজ অ্যাটন বলেন, ‘তার খাদ্যাভ্যাসের বড় একটা অংশ ছিল চিপস, স্থানীয় মাছ ও ফ্রেন্স ফ্রাই। কিশোর জানিয়েছিল, বেশ কিছু খাবার সে একেবারেই সহ্য করতে পারতো না। এ কারণে সে শুধু চিপস, ফ্রেন্স ফ্রাই ও মাঝে মাঝে সসেজ বা হ্যাম খেতো।’
চিকিৎসক অ্যাটন তার সহকর্মীদের সাথে গবেষণা করে দেখেছে, কিশোরটির শরীরে ভিটামিনের মাত্রা আশঙ্কাজনক মাত্রায় কম ছিল, সাথে বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান তথা- কপার, সেলেনিয়াম ও ভিটামিন-ডি তেও ঘাটতি পাওয়া গিয়েছিল।
কিশোরটি ওজন খুব বেশি কম বা বেশি কোনটাই নয়। কিন্তু এমন অদ্ভুত খাদ্যাভ্যাসের দরুন তার শরীরে পুষ্টির ভয়াবহ অভাব তৈরি হয়। তার চোখের এই সমস্যাটিকে বলা হয় নিউট্রিশনাল অপটিক নিউরোপ্যাথি (Nutritional optic neuropathy).
প্রাথমিক অবস্থায় এই সমস্যাটি শনাক্ত করা সম্ভব হলে চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব হতো। কিন্তু বহুদিন ধরে সমস্যাটি অলক্ষ্যে রয়ে যাওয়ার ফলে কিশোরের অপটিক নার্ভের নার্ভ ফাইবার সম্পূর্ণ মরে গেছে এবং স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে তার চোখের সমস্যাটি পুরোপুরি স্থায়ী।