মিয়ানমারের সেনা ও বিদ্রোহীদের প্রতি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আহ্বান

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-22 10:34:50

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং দেশটির উত্তরের শান প্রদেশে লড়াইরত বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সাধারণ নাগরিকদের রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে নিউ ইয়র্কের হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এক বিবৃতির মাধ্যমে সংস্থাটি এ আহ্বান জানিয়েছে।

১৫ আগস্ট শুরু হওয়া এ লড়াইয়ে কমপক্ষে ১৭ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে এবং ২৭ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আগস্টের লড়াইয়ে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং অস্থায়ী আশ্রয়ে রয়েছেন সাড়ে তিন হাজার লোক।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, দুই পক্ষের সশস্ত্র লড়াইয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে সাহায্য পৌঁছানোর সব পথ বন্ধ রয়েছে। ফলে সেখানে খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বলেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং বিদ্রোহী সশস্ত্র দলগুলোর উচিত বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় যুদ্ধের আইনের একটি মূল নিয়ম মেনে চলা। যুদ্ধের সময় সব পক্ষের উচিত বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে বেআইনি আক্রমণ বন্ধ করা এবং সাধারণ জনগণের কাছে যথাযথভাবে সাহায্য পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা।

a

অ্যাডামস আরো বলেন, সাধারণ মানুষের সেবা করতে দেওয়া উচিত। মানবতাবাদী সংস্থাগুলোকে অহেতুক বেসামরিক মানুষের কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে মিয়ানমার সরকার দেশজুড়ে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে অসংখ্য বার সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়েছে। এসব সশস্ত্র দলের মধ্যে তা'আং জাতীয় মুক্তি বাহিনী, মায়ানমার জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট সেনা, আরাকান সেনা এবং কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি উত্তর জোট নামে চারটি দল জোটবদ্ধ হয়েছে।

১৫ আগস্ট উত্তর মৈত্রী বাহিনী, কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি, ম্যান্ডেলের নিকটবর্তী লশিও, ন্যাংহকিয়ো এবং পাইয়ন ওউ লুইনে সামরিক লক্ষ্য এবং বেসামরিক কাঠামোর ওপর সমন্বিত আক্রমণ চালানোর পরে সাম্প্রতিক এ যুদ্ধ শুরু হয়।

এ সশস্ত্র জোটটি ১৫ আগস্ট আর্মি একাডেমিসহ ছয়টি স্থানে সমন্বিত হামলা চালায়। এর ফলে ১৫ জন নিহত হন। এর পরেই সেনাদের সঙ্গে বিদ্রোহী জোটের লাগাতার সংঘর্ষের খবর মিয়ানমার মিডিয়া জানিয়েছে।

শান স্টেটের ন্যাংচো জনপদের কাছে পাইয়ন ওউ লুইন অঞ্চলে ডিফেন্স সার্ভিসেস টেকনোলজিক্যাল একাডেমিসহ বিদ্রোহী জোটটি ছয়টি ভিন্ন এলাকায় হামলা চালানোর পর এ সংঘর্ষ বেড়েই চলেছে।

এ হামলায় স্থানীয় ব্রিজের একটি প্রহরী চৌকিতে সাতজন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হন। ব্রিজটি চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী চীন সীমান্তের নিকটবর্তী কুতকাই শহরের কাছে এবং উত্তর-পূর্ব ল্যাসিও জনপদ জুড়ে পাল্টা লড়াই শুরু করে। এলাকাটির প্রধান হাইওয়ে জুড়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, যুদ্ধের আইন অনুযায়ী, অ্যাম্বুলেন্স এবং অন্যান্য মেডিকেল ট্রান্সপোর্টের ওপর আক্রমণ নিষিদ্ধ।

৩১ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং উত্তর জোট বাহিনীর মধ্যে ভারী গোলা বিনিময়ে কুতকাইতের পাঁচ বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে তিনটি শিশু রয়েছে। তাদের বাড়িতে একটি মর্টার শেল আঘাত হানায় আরো দু’জন আহত হন। কোনো পক্ষই এ হামলার দায় স্বীকার করেনি। বরং পরস্পর দোষ দিয়েছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২ সেপ্টেম্বর কুতকাই জনপদে হেলিকপ্টার হামলা চালিয়ে একটি মঠ এবং কিছু বেসামরিক সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি করেছে বলে জানা গেছে।

৩৪৬টি বেসরকারি সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল ৩ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে এ লড়াইয়ের নিন্দা জানিয়েছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণ অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে।

৪ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারে জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী জুন কুনুগি এক বিবৃতিতে বলেন, উত্তর শান প্রদেশে সাম্প্রতিক লড়াইয়ে কমপক্ষে ১৭ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

a

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, আন্তর্জাতিক মানবতা আইন বা যুদ্ধের আইন মেনে বেসামরিক জনগণকে রক্ষার জন্য সামরিক অভিযানের সময় সংঘাতের ঝুঁকি ও বেসামরিক জনসাধারণের ক্ষয়ক্ষতি ও বেসামরিক বস্তুর ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সমস্ত সম্ভাব্য সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক জনগণ বা বেসামরিক বস্তুর ওপর আক্রমণ করা নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয়, নির্বিচারে বা অসমর্থনমূলক আক্রমণ করাও নিষিদ্ধ। জনবহুল অঞ্চলে আর্টিলারি এবং মর্টার শেলের মতো ভয়াবহ ক্ষতি সাধনকারী বিস্ফোরকও এড়ানো উচিত।

কুতকাইতে অবস্থিত একটি বেসরকারি সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছে, আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর কোনো সহায়তা এখনো তাদের কাছে পৌঁছায়নি।

যুদ্ধের আইনের অধীনে, লড়াইরত উভয়পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের মানবিক সহায়তার জন্য দ্রুত সাহায্য পৌঁছানোর অনুমতি দিতে হবে। মানবিক সহায়তাকারীদের চলাফেরার স্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর