সিআইএ-র গুপ্তচর কবুতর

আমেরিকা, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-30 14:52:20

শান্তির প্রতীক পায়রা। আদিকাল থেকেই মানুষের সঙ্গে দারুণ সখ্যতা পায়রার। দূর-দূরান্তে বার্তা প্রেরণে পায়রা তথা কবুতরের বহুল ব্যবহারের কথাও আমরা সবাই জানি। তবে শুধু বার্তাপ্রেরণই নয় গুপ্তচরবৃত্তিতে দারুণ কার্যকর কবুতর। শুধু প্রয়োজন একটু প্রশিক্ষণ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময় থেকেই গোয়েন্দাকাজে কবুতরের ব্যবহার শুরু হয়। যেটা এখন বিশ্বের নানা গোয়েন্দা সংস্থাতেই বহুল প্রচলিত। তবে কবুতর দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তিতে সবচেয়ে এগিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।

স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন গোপন মিশনেও তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর কবুতর দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়েছিল। সম্প্রতি এ সম্পর্কিত কিছু নথিপত্র প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। বিবিসির সিকিউরিটি করেসপন্ডেন্ট গর্ডন কোরেরা এক প্রতিবেদনে সেইসব ঘটনার কিছু প্রকাশিত হয়েছে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের অভ্যন্তরের স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি করতে কবুতরের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, কাকের মাধ্যমে জানালায় বাগিং ডিভাইস স্থাপন, ডলফিনের দ্বারা সমুদ্রপথে গোপন মিশন পরিচালনা-সবকিছুই উঠে এসেছে গোপন এসব নথিতে।

সিআইএ’র বিশ্বাস, গোয়েন্দা সংস্থার গোপনীয় মিশনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো পশুপাখি দ্বারা ‘ইউনিক’ভাবে সম্পাদন করা যায়।

জানা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ গোয়েন্দ সংস্থা এমআই-১৪ কবুতর দিয়ে ইউরোপ অধিকৃত এলাকাতে গোপন মিশন পরিচালনা করেছিল। কবুতর পাঠিয়ে তারা জার্মান রাডার স্টেশন ও ভি-১ রকেট লঞ্চ সাইট সম্পর্কিত তথ্য উদ্ধার করেছিল।

আর এ জন্য কবুতেরর গায়ে একটি প্রশ্নপত্র যুক্ত করেছিলেন ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। সেই প্রশ্নের উত্তরগুলো নিয়ে হাজারের উপরে কবুতর শেষ পর্যন্ত সফলভাবে ফিরে এসেছিল তাদের কাছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয় পরাশক্তিগুলোর মধ্যে। স্নায়ুযুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বিকল্পগুলো অনুসন্ধানে ব্রিটেনের যৌথ গোয়েন্দা কমিটি একটি  ‘কবুতর উপকমিটি’ তখন গঠন করেছিল। কবুতর এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের জন্য। কিন্তু ব্রিটিশদের এই কার্যক্রম একপর্যায়ে বন্ধ হয়। তখন সিআইএ কবুতর ব্যবহারের মধ্যদিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি শুরু করে।

নতুন প্রকাশিত নথি থেকে জানা যায়, ১৯৭০ সালের পরিচালিত অপারেশনের কোডনেম ছিল টেকানা। কবুতরের সাহায্যে ছোট্ট ক্যামেরা দিয়ে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ছবি তোলা তখন থেকে শুরু হয়। অপারেশন টেকানায় শুধু কবুতর নয় বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখির সাহায্য নেয় তারা।

প্রকাশিত নথি থেকে জানা যায়, দুর্গম ভবনগুলো থেকে ৪০গ্রাম ওজনের ছোট ছোট বাগ স্থাপন ও তুলে আনতে কাকও প্রশিক্ষিত করেছিল সিআইএ।

এছাড়া ফ্লোরিযার দক্ষিণ উপকূলে সিআইএ’র অপর একটি দল ডলফিনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। প্রশিক্ষিত সেসব ডলফিন পানির নিচে শত্রুপক্ষের জাহাজে আক্রমণে সক্ষম ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমাণবিক সাবমেরিন গুলোর শব্দগ্রহণে সক্ষম সেন্সর বহন করে সেসব ডলফিন পানির নিচে চলাচল করত। এভাবে তারা কুকুর, বিড়াল, শকুনসহ নানা প্রজাতির প্রাণীকে গোয়েন্দা কার্যক্রমে নামিয়ে দিয়েছিল।

তবে সিআইএর মতে, গুপ্তচরবৃত্তিতে সবচেয়ে কার্যকর ছিল কবুতর। সত্তরের দশকের মাঝামাঝিতে সিআইএ কবুতর দিয়ে কয়েকটি পরীক্ষামূলক মিশনও পরিচালনা করে। এর একটি ছিল একজন বন্দীকে নিয়ে অপরটি ছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত নৌঘাটির উপরে।

পরীক্ষামূলক সে মিশনে ক্যামেরায় খরচ হয়েছিল দুই হাজার ডলার, যার ওজন ছিল ৩৫ গ্রাম। হার্নেসের ওজন মাত্র ৫ গ্রাম। পরীক্ষায় দেখা যায়, কবুতরের সাহায্যে তোলা ১৪০টি ছবি বেশিরভাগই ছিল উন্নতমানের। ছবিগুলো এতই পরিষ্কার ছিল যে, নৌঘাটিতে মানুষের হাটাচলা, পার্কিংরত গাড়ি সবকিছুই ছিল স্পষ্ট।

বিশেষজ্ঞরা দেখতে পায়, সেই সময় গোয়েন্দা স্যাটেলাইটের তোলা ছবির চেয়ে কবুতরের সাহায্যে তোলার ছবির মান বেশি উন্নত। সেই পরীক্ষামূলক সফলতা থেকেই গোয়েন্দারা তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর নজরদারিতে কবুতর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

নথি থেকে দেখা যায়, মস্কোগামী জাহাজগুলোতে খুব গোপনে প্রশিক্ষিত কবুতর পাঠানো হত। যে কবুতর দিয়ে লেনিনগ্রাদের শিপইয়ার্ডে তৈরি হতে থাকা সোভিয়েত সাবমেরিনগুলোর উপর নজর রাখতে পেরেছিল তারা।

এভাবে অনেক গোপন মিশনেই কবুতরের ব্যবহার শুরু করে সিআইএ ।

গুপ্তচর কবুতর দিয়ে কতগুলো মিশন পরিচালিত হয়েছে এবং সেসব মিশনে কী কী গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলো এখনো অপ্রকাশিতই রয়ে গেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর