২১০০ সালে পানিতে তলিয়ে যাবে ঢাকাসহ বিশ্বের ১১ শহর

বিবিধ, আন্তর্জাতিক

আব্দুল্লাহ মামুন, নিউজরুম এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-30 22:43:22

বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা দিন দিন বেড়ে চলছে। যার ফলে প্রতিবছরই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে বিশ্বের উপকূলীয় শহরগুলোকে। দুর্যোগ মোকাবেলায় এবং সমাধানে নানামুখী কাজ করে যাচ্ছে বিপর্যস্ত দেশগুলো।

সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২১০০ সালের মধ্যে পানির নিচে চলে যাবে বিশ্বের ১১ টি শহর। যার মধ্যে চতুর্থ স্থান দখল করেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। বৈশ্বিক উষ্ণতা, সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ফলে এমনটি ঘটবে বলে জানায় সংস্থাটি।

রাজধানী ঢাকা বাদে এই তলিকায় স্থান পাওয়া অন্য শহরগুলো হচ্ছে জাকার্তা, লাগোস, হিউস্টন, ভেনিস, ভার্জিনিয়া, ব্যাংকক, নিউ অরলিন্স, রোটারডাম, আলেকজান্দ্রিয়া ও মিয়ামি।

জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া

জাকার্তা

 

অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করার কারণে প্রতি বছর ৬.৭ ইঞ্চি পর্যন্ত ডুবে যাচ্ছে শহরটি। গবেষকদের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে শহরটির বেশিরভাগ অংশ পানির নিচে থাকবে। এদিকে নতুন শহর করার জন্য দেশটির সরকার ইতিমধ্যেই ৩৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

লাগোস, নাইজেরিয়া

লাগোস

 

বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি বৃদ্ধির কারণে বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে নাইজেরিয়ার উপকূলবর্তী সবচেয়ে বড় শহর লাগোস। ২০১২ সালে প্লাইমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই উপকূলের পানির উচ্চতা ৩ থেকে ৯ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

হিউস্টন, টেক্সাস

হিউস্টন

 

টেক্সাসের এই শহরটি অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করার ফলে বছরে ২ ইঞ্চি পর্যন্ত ডুবে যাচ্ছে শহরটি। সেই সাথে বেড়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার। যার ফলে গৃহহীন হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।

ঢাকা, বাংলাদেশ

ঢাকা

 

প্রতি বছর শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কার্বন নির্গমণ করে বাংলাদেশ। যা জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব বিস্তার করে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, 'সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে দেশটি সবচেয়ে বড় ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।'

ধারণা করা হচ্ছে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের এক কোটি ১৮ লাখ লোক তাদের আবাসস্থল হারাবে এবং দেশের ১৭ শতাংশ জমি পানি নিচে তলিয়ে যাবে।

ভেনিস, ইতালি

ভেনিস

 

ইতালির এই শহরটি প্রতি বছর শূন্য দশমিক শূন্য ৮ ইঞ্চি হারে নিমজ্জিত হচ্ছে। শহরটিকে বাঁচাতে দেশটির সরকার ৬.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করে বাঁধ নির্মাণ করেছে।

ভার্জিনিয়া

শহরটি সাগর ও বায়ুমণ্ডলীয় বিষয়ক পরিষদ বলছে, ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা ১২ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।

ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

ব্যাংকক

 

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গার্ডিয়ানে'র মতে, ব্যাংকক শহরটি বছরে ১ ইঞ্চির বেশি হারে ডুবে যাচ্ছে। আশংকা করা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে চলে যেতে পারে। এদিকে বন্যা প্রতিরোধের জন্য দেশটির একটি আর্কিটেকচার ফার্ম ১১ একরের উপর একটি পার্ক তৈরি করেছে। যা ১ মিলিয়ন গ্যালন বৃষ্টির জল ধরে রাখতে সক্ষম।

নিউ অরলিন্স, লুজিয়ানা

নিউ অরলিন্স

 

 

প্রতি বছর ২ ইঞ্চি হারে ডুবে যাচ্ছে নিউ অরলিন্স শহরটি। নাসার ২০১৬ সালের একটি গবেষণা এ তথ্য পাওয়া যায়। জানা গেছে, ইতিমধ্যেই শহরের কিছু অংশ সুমদ্রপৃষ্ঠের ১৫ ফুট নিচে রয়েছে।

রোটারডাম, নেদারল্যান্ড

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, ইতিমধ্যেই নেদারল্যান্ডের রোটারডাম শহরটির ৯০ শতাংশ অংশই সুমদ্রপৃষ্ঠের নিচে রয়েছে। সমুদ্রের স্তর বাড়ার সাথে সাথে শহরটিতে বন্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে।

শহরটিকে রক্ষা করতে ইতিমধ্যে ডাচ সরকার একটি ওয়াটার পার্ক তৈরি করেছে।

আলেকজান্দ্রিয়া, মিশর

আলেকজান্দ্রিয়া

 

এনপিআর মতে, ২১০০ সালের ভিতরে ভূমধ্যসাগরের উচ্চতা ২ ফুট বাড়লে বিলুপ্ত হয়ে যাবে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া নামক শহরটি।

মিয়ামি

মিয়ামি

 

পরিবেশ লেখক জেফ গুডেল এর মতে, এই শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত মিয়ামিকে দেখা যাবে না। তিনি বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে শহরটিতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে শহরটিকে খুব শীঘ্রই তার কাঠামো পরিবর্তন করতে হতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর