বিক্ষোভে উত্তাল লেবানন

মধ্যপ্রাচ্য, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-23 20:36:46

অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়ে আছে লেবানন। ক্রমহ্রাসমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে দেশটির হাজারো জনতা। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) থেকে এই বিক্ষোভ করে আসছে লেবাননবাসী।

এর আগে বৃহস্পতিবার দেশটির মন্ত্রিসভা থেকে আসা এক আদেশে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভয়েস কলের ওপর ২০ সেন্ট (বাংলা ১৭ টাকা) করে ভ্যাট দিতে হবে। মূলত এ থেকেই উত্থান হয় বিক্ষোভের।

এছাড়া মন্ত্রিসভা থেকে এ খাতে ভ্যাট আরো বাড়ানোর ইঙ্গিত দেওয়া হয়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ।

বিক্ষোভের মুখে দেশটির সরকার বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ভ্যাট আদেশ প্রত্যাহার করলেও থামেনি বিক্ষোভ।

জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, দুর্নীতি, জ্বালানি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লেবাননবাসীর এই বিক্ষোভ

আন্দোলনকারীরা দেশটির বৈরুতে সরকারি সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ করতে জড়ো হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় তারা ব্যারিকেড দিয়ে দেশটির কয়েকটি প্রধান সড়ক বন্ধ করে দেয় এবং সে সঙ্গে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। তাদের দাবি, তারা শুধু ভ্যাট বাড়ানোয় আন্দোলন করছে না। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, দুর্নীতি, জ্বালানি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে তাদের এই বিক্ষোভ।

দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার (এনএনএ) তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীরা একটি ভবনে আগুন দেয়। আর আগুনে উৎপন্ন ধোঁয়া থেকে দুইজন বিদেশি নাগরিক মারা গেছেন। এছাড়া শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা উত্তর, দক্ষিণ ও বেকা উপত্যকার অন্যান্য অঞ্চলগুলোর মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং সরকারি ভবনগুলো অবরুদ্ধ করে রেখেছে। এতে স্থবির হয়ে গেছে সকল সরকারি কার্যক্রম। চলমান বিক্ষোভে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দেশটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

শুক্রবার বৈরুতের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে যাওয়ার রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এর ফলে বিপাকে পড়েন দেশটিতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা।

বিক্ষোভে লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনীর (আইএসএফ) ৪০ জন সদস্য আহত হয়েছেন বলে এক টুইট বার্তায় দাবি করে আইএসএফ। আর রেড ক্রসের তথ্য মতে, বিক্ষোভে প্রায় ১৬০ জন আহত হয়েছেন। আর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য মতে, নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। 

বিক্ষোভকারীরা সরকার বিরোধী স্লোগান দিয়ে আসছে

তবে বিক্ষোভ ছোট আকারে শুরু হলেও তা এখন বিরাট আকার ধারণ করেছে। বিক্ষোভকারীরা সরকার বিরোধী স্লোগান দিয়ে আসছে। আর ক্ষমতাসীন দলকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিক্ষোভকারীদের হটাতে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করছে।

বিক্ষোভের মুখে অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ৭২ ঘণ্টার সময় বেধে দিয়েছেন। তিনি শুক্রবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, 'লেবাননদের ব্যথা সত্য। তারা আমাদের কাছে এর সমাধান চায়। কিন্তু আমি তা এখনি দিতে পারছি না।' সাক্ষাৎকারে তিনি সমস্যার জন্য তার সরকারের অংশীদার দলগুলোকে দোষারোপ করেন।

হরিরি, বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'লেবানন একটি কঠিন সময় পার করছে।'

হাডি ওমর নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছি। আমরা ভাল আচরণ করার চেষ্টা করছি। ওমর আরও বলেন, আমরা যদি শান্তিপূর্ণভাবে না থাকতে পারি তাহলে কাউকে ভালভাবে থাকতে দেব না।

আরেক বিক্ষোভকারী আলি সারেব বলেন, আমাদের ঘরে বিদ্যুৎ নেই, জল নেই। তৃতীয় বিশ্বের থেকে আমরা খারাপভাবে জীবনযাপন করছি।

এ দিকে বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, লেবাননের জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ দারিদ্রসীমার অধীনে বাস করে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর