আইসিসির হস্তক্ষেপ মানবে না মিয়ানমার

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-31 14:25:58

রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যে খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে, তা খারিজ করে দিয়েছে দেশটি।

জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি হাও দো সাং সোমবার (৪ নভেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৪তম সম্মেলনের ২৬তম সংশোধিত সভায় এ বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন।

এ সভায় মিয়ানমারের প্রতিনিধি বলেন, আইসিসি রাখাইন রাজ্যের বিষয়টিকে ধর্মীয় ইস্যু হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। প্রকৃতপক্ষে, এটি ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলে সীমান্ত পেরিয়ে আসার একটি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যা। ১৯৭১ সালেও অনেককেই বাংলাদেশ থেকে রাখাইন রাজ্যে পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা সীমান্ত অতিক্রম করে। আইসিসি এ ইস্যুতে কোনো সুবিধা নিতে পারবে না, কারণ মিয়ানমার এটিতে সম্মত নয়। আইসিসি মনে করেছে, রোম সনদ অনুযায়ী ঘটনার তদন্ত করার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে। কিন্তু রোম সনদে মিয়ানমার সই করেনি। তাই এটি তদন্ত করার কোনো অধিকার আইসিসির নেই।

২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আইসিসি জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করার কর্তৃত্ব আদালতের রয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রি-ট্রায়াল চেম্বার তাদের এ রায় দিয়েছে।

তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রি-ট্রায়াল চেম্বারের তিনজন বিচারকের মধ্যে দু’জন একমত পোষণ করলেও একজন ভিন্নমত দেখিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌসুলি আদালতের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে রোহিঙ্গাদের যেভাবে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে, সেটির তদন্ত করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রয়েছে কিনা।

সে প্রেক্ষাপটে আইসিসির প্রি-ট্রায়াল চেম্বার রায় দিয়েছে যে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য না হলেও রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের কারণে ঘটনার একটি অংশ বাংলাদেশে সংগঠিত হয়েছে।

ফলে আইসিসি মনে করেছে, রোম সনদ অনুযায়ী ঘটনার তদন্ত করার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে।

এ রায়ের ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌসুলি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের প্রাথমিক তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবেন।

তবে আদালত জানিয়েছে যে এ ধরনের তদন্ত একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগের দায়ে মিয়ানমারের সেনা প্রধানসহ শীর্ষ ছয়জন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচার হওয়া দরকার।

এছাড়া, ঘটনা বিচারের জন্য বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরুর পর সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ফেলে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। নতুন এবং পুরাতন মিলিয়ে ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এখন ১০ লাখেরও বেশি।

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া, লুটপাট, অপহরণ আর ধর্ষণের অভিযোগ করেছে।

মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, আইসিসি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বেআইনি কাজ করছে। মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যের সব বাসিন্দাদের স্বার্থে কাজ করছে। আইসিসি আবেগের ওপর ভিত্তি করে একটি মামলা তৈরি করেছে। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার সমসাময়িক সমস্যা সমাধানের জন্য রাখাইন রাজ্যে উপদেষ্টা নিয়োগ করেছে। আরাকান আর্মির হামলায় হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশে চলে গেছে। প্রকৃত অপরাধী একমাত্র সন্ত্রাসীরা। মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশ, ইউএনএইচসিআর, আসিয়ান এবং স্থানীয় অংশীদারিত্বের সঙ্গে এ সংকট মোকাবিলায় কাজ করছে। তবে আরাকান আর্মি গ্রুপ হুমকির পরেও ৪শ’রও বেশি অধিবাসী রাখাইন রাজ্যে ফিরে এসেছে। প্রত্যাবাসনের জন্য দুই দেশের চুক্তি বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর