দুবাইয়ে সারোগেসির প্রতারণায় স্বামীকে স্ত্রীর তালাক

মধ্যপ্রাচ্য, আন্তর্জাতিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-15 03:19:20

সরোগেসির মাধ্যমে অন্য এক নারীর গর্ভে সন্তান জন্ম দেওয়ায় স্ত্রী (৩৭) তার স্বামীর (৩৮) বিরুদ্ধে দুবাইয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় দুবাইয়ের পার্সোনাল স্ট্যাটাস কোর্ট ওই নারীর পক্ষে রায় দেন। এ ধরনের মামলা সংযুক্ত আরব আমিরাতে এটিই প্রথম।

ভারতীয় এই দম্পতি ১৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে বাবা-মা হতে পারেননি।

২০১৬ সালে, স্ত্রী জানতে পারেন তার স্বামী কেবল একজন সারোগেসি মা হিসাবে তার নাম ব্যবহার করেননি, বরং তার সম্মতি ছাড়াই তার নামে শিশুটিকে নিবন্ধনভুক্ত করেছেন। এটা জানার পর তিনি তালাক চান।

মহিলার আইনজীবী আয়াতিফ মোহাম্মদ খৌরি আদালতকে বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ এবং গোপনীয়তা দেওয়ার পরিবর্তে, স্বামী তার স্ত্রীকে সারোগেসি পদ্ধতি অনুমোদনের জন্য একটি নথিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।

মহিলা ভারতে প্রথমে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেছিলেন তবে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে এই শিশু মেয়েটির জন্ম হয়।

মহিলা কোর্টকে বলেন, ‘আমি জানতাম না যে শিশুটির জন্ম সনদে আমার নামে নিবন্ধনভুক্ত করবেন তিনি। আমার অনুমতি ছাড়াই তিনি অন্য মহিলার গর্ভ ভাড়া করে আরেক মহিলার ডিম্বাণু ব্যবহার করেন। সন্তান জন্মের পর থেকে তিনি আমার ওপর নির্যাতন করতে থাকেন এবং ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন। তিনি আমাকে বাসা থেকে বের দেন।

ওই মহিলা আরও বলেন, আমি যখন বাসা থেকে বের হতে অস্বীকার করলাম, তখন তিনি আমার সমস্ত গয়না নিয়ে যান। এবং জানিয়ে দেন ওই শিশুর মেয়ের জন্ম সনদে তার নাম জৈবিক মা হিসাবে বহন করবে।

তিনি দুবাইয়ে একটি বিবাহ বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ এবং তার নাম সন্তানের জৈবিক মা হিসাবে অপসারণের জন্য একটি মামলা দায়ের করেন।

২০১৯ সালের মার্চে আদালতকে স্বামী জানিয়েছিলেন যে সারোগেসি প্রক্রিয়া স্ত্রীর জ্ঞান এবং সম্মতিতে করা হয়েছিল। তবে প্রসবের তারিখ যতই নিকটে আসতে ছিল ততই তার স্ত্রী মন পরিবর্তন করছিলেন।

স্বামী দাবি করেন ভারতে এই পদ্ধতিটি গ্রহণ করা হয়েছিল, যেখানে সারোগেসি বৈধ। এমনকি তার দাবি সমর্থন করার জন্য তিনি ভারতীয় আইনের একটি অনুলিপিও জমা দেন, অনুরোধ করেন যে এই ক্ষেত্রে তার দেশের আইন প্রয়োগ করা হোক।

তবে, মহিলার আইনজীবী আদালতকে বলেন, সারোগেসি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইন এবং জনসাধারণের নৈতিকতার পরিপন্থী। যদিও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেশ কয়েকটি মামলায় ভারতীয় আইন প্রয়োগ করা যেতে পারে, তবে এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এটি করা যাবে না কারণ সারোগেসি সেই দেশের আইন ও পাবলিক নৈতিকতার পরিপন্থী।

দুবাইয়ের আদালত আদেশ দিয়েছে যে শিশুটিকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রেফার করা হবে, কিন্তু বাবা সেই আদেশটি অনুসরণ করতে ব্যর্থ হন যার পরে আদালত মহিলার পক্ষে রায় দেয়।

মহিলার আইনজীবী বলেন, ‘আদালতের রায় অনুসারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী সারোগেসি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল যা দেশের আইন ও জনসাধারণের নৈতিকতার অঙ্গ’। মামলার নথি অনুসারে, সারোগেসি কোনও সন্তানের বংশ প্রমাণ করে না।

আদালত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আমার ক্লায়েন্ট সন্তানের জৈবিক মা নয়। যদি মহিলাটির ডিম্বাণু সারোগেসি প্রক্রিয়াটিতে ব্যবহৃত হত তারপরেও তিনি জৈবিক মা হতেন না।

সারোগেসি কী?
সারোগেসি এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে কোনও মহিলা (সারোগেট মা) অন্য কোনও ব্যক্তি বা দম্পতির জন্য সন্তানের জন্ম দিতে সম্মত হন, যিনি জন্মের পরে সন্তানের পিতা বা মাতা হয়ে উঠেন। সারোগেসির বৈধতা দেশ ভেদে ভিন্ন রয়েছে । অনেক দেশ এখনও সারোগেসি নিয়ে কাজ করছে। কিছু দেশ সারোগেসিকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করলেও অনেক দেশ বাণিজ্যিক সারোগেসির অনুমতি দেয় না। রাশিয়া ও ইউক্রেন একমাত্র দেশ যেখানে সব রকম সারোগেসি বৈধ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর