মিয়ানমারের বিচারে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো মুখোমুখি অবস্থানে

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 14:25:10

মিয়ানমারের বিচারে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো মুখোমুখি অবস্থানে চলে এসেছে। রাখাইন রাজ্যে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) লড়তে কোনো কোনো গোষ্ঠী অং সান সু চিকে সমর্থন দিচ্ছে। অন্যদিকে কোনো কোনো গোষ্ঠী আইসিজে তদন্তের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছে।

মিয়ানমারকে রক্ষা করার জন্য আইনজীবীদের একটি দলের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন স্টেট কাউন্সিলর সু চি। তার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি (ইউডাব্লুএসএ)।

অন্যদিকে আরো একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাআং জাতীয় মুক্তি বাহিনী, আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের সেনা- যারা উত্তর জোটের সদস্য, তারাও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) উত্তরে রাখাইন রাজ্যে মুসলিম সংখ্যালঘু গণহত্যার অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউডাব্লুএসএ শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের মর্যাদা রক্ষার জন্য সুচির হেগ সফরের পরিকল্পনার প্রশংসা করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যে কোনও পক্ষপাত বা অবৈধ আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ রাখাইন রাজ্যে আরও অস্থিতিশীলতা ও বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে। কারণ এ পরিস্থিতির সঙ্গে জড়িত আছে জমি, ধর্ম, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য এবং সামরিক বাহিনী। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে কোনও বিচারবহির্ভূত প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে।

আর একটি নৃগোষ্ঠী সশস্ত্র দল, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, যা মাইন লার স্পেশাল অঞ্চল ৪ নিয়ন্ত্রণ করে, তারাও সু চির পদক্ষেপকে সমর্থনও জানিয়েছে।

ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এক বিবৃতিতে বলেছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এ মামলাটি উত্তর শান স্টেটের বিশেষ অঞ্চল ৪ কে প্রভাবিত করে। আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে মিয়ানমারের কণ্ঠ শোনার আহ্বান জানাই।

সম্প্রতি তিনটি জাতিগত সশস্ত্র দল যারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত, তারা এ মামলার বিরুদ্ধে সু চির পক্ষে সমর্থন দিয়েছে।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এ গণহত্যার অভিযোগ তদন্তের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে সমর্থন দিয়েছে তাআং জাতীয় মুক্তি বাহিনী, আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের সেনারাও। তারা এ দু'টি আন্তর্জাতিক বিচারিক সংস্থাকে গণহত্যার অভিযোগের সত্যতা খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে এবং সরকারি বাহিনীর চালানো গণহত্যার প্রমাণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

এ তিনটি গোষ্ঠী ১৯ থেকে ২১ নভেম্বর পিস প্রসেস স্টিয়ারিং টিমের সভা শেষে এক বিবৃতিতে বলেছে, গত ৭০ বছরের সশস্ত্র লড়াইয়ের সময় সামরিক
বাহিনী গণহত্যা, বিচার বহির্ভূত গ্রেফতার, নির্যাতন, অপহরণ এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম হিসেবে গণধর্ষণকে ব্যবহার করেছে।

জোট জানায়, তারা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করতে এবং ২০০৯ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে উত্তর-পূর্ব শান এবং পশ্চিম রাখাইনে সামরিক বাহিনী যে যুদ্ধাপরাধ করেছে, তার প্রমাণ সংগ্রহ করতে প্রস্তুত রয়েছে।

গত মাসের শুরুতে দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠী বলেছে যে তারা থাইল্যান্ডের চিয়াং মাইতে বৈঠককালে আইসিজে মামলা নিয়ে আলোচনা করেছে।

শান স্টেটের পুনরুদ্ধার কাউন্সিলের মুখপাত্র কর্নেল সাই এনগেন বলেছেন, আমরা অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক আক্রমণগুলো প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি, যা মিয়ানমারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। মিয়ানমারের যে কোনও সমস্যা আমাদের বিষয়। আলোচনা ধীর গতিতে চলার কারণে গত বছর জাতীয় শান্তি প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছিল।

আরেকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ক্যারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন মিয়ানমার সরকারকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতি ও মান মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।

ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার পক্ষে গাম্বিয়া কর্তৃক দায়ের করা গণহত্যা মামলার প্রথম পাবলিক শুনানি ১০-১২ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডসের হেগে অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মুসলমানদের গণহত্যা করার অভিযোগ এনেছে।

মিয়ানমারের বেশিরভাগ মানুষ রাখাইনের মুসলমানদের বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী বলে বিবেচনা করে, যদিও কেউ কেউ উত্তর রাখাইন বংশ পরম্পরায় বাস করে আসছিল।

রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মুখপাত্র ইউ জাও এইচটি বলেছেন, মিয়ানমার সরকার আইসিজের কাছে দায়ের করা এ জালিয়াতির জবাব দেবে, কারণ
তারা জাতিসংঘের সদস্য। কিন্তু আইসিসির কাছে দায়ের করা মামলার প্রতিক্রিয়া জানাবে না, কারণ মিয়ানমার আন্তর্জাতিক এ সংস্থায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে স্বাক্ষর করেনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর