রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণ মিয়ানমারে স্থিতিশীলতা

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 22:44:07

বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মিয়ানমারের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক এবং প্রতিরক্ষার ভবিষ্যৎ নির্মাণ করার কথা জানিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লেইং।

তিনি বলেছেন, ‘রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণ মিয়ানমারে স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে।’

মিয়ানমারের স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ৩০ নভেম্বর কমান্ডার-ইন-চিফ এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজের কার্যালয় থেকে কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে সেনাবাহিনীর প্রধান এসব কথা বলেন।

সেনাবাহিনী প্রধান রাষ্ট্রপতি হতে চান বলে মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অনুমান করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে মিয়ানমারের সাবেক সংসদ সদস্য ইউ ই হান্টুন বলেন, ‘আমার বিশ্বাস সেনাবাহিনীর প্রধান হ্লাইং ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপতি হতে চান। তিনি রাজনীতির উপর হতাশ হয়ে এ কথা বলছেন। আমি মাঝে মাঝে একইরকম অনুভব করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ইউ উইন মিন্ট এবং ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) স্ট্যাট কাউন্সিলের অং সান সু চি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক এবং প্রতিরক্ষাকে সঠিক মার্গ দর্শন দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা যে অক্ষম তা মিয়ানমারের বিস্তৃত বর্তমান পরিস্থিতির চিত্র দেখলেই বুঝা যায়। সঠিক নীতি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষে সকল দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’

সাবেক এই এমপি বলেন, ‘যদি সেনাবাহিনী সত্যিই বেসামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে আমি মনে করি না যে, তিনি (সিনিয়র জেনারেল) এই বিষয়গুলো বলার সাহস করবেন।’

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাও মিন তুন বলেন, ‘সিনিয়র জেনারেল যা বলেছেন, তা কেবল প্রচলিত বক্তব্য। কারণ, সশস্ত্র বাহিনী দিবসে তার বক্তব্যে বিষয়গুলো আগেও বলেছিলেন। জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজে প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোর কমান্ডার-ইন-চিফ একই বছরে একবার বা দু'বার একই বক্তব্য দেন।’

সামরিক মুখপাত্র বলেন, ‘প্রশাসনের উচিত নির্দিষ্ট দলের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়া। দলগুলো কেবল ক্ষমতার পক্ষে লড়াই করে এবং জাতীয় স্বার্থের জন্য সামঞ্জস্য রেখে কাজ করতে ব্যর্থ হয়। দেশের উন্নয়নের জন্য দলগুলোর সহযোগিতা করা উচিত।’

২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সেনাবাহিনী মেনে চলবে বলেও জানান তিনি।

২০১৫ সালে নির্বাচনের পর সেনাপ্রধান এবং অং সান সু চি-র মধ্যে ব্যক্তিগত আলোচনা হয়েছিল। তবে সেই আলোচনা ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হয়েছিল। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি থেকে দুজনের আর দেখা সাক্ষাৎ হয়নি।

সংবিধান সংশোধন করার জন্য এনএলডির প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সামরিক বিরোধিতা ইঙ্গিত দেয় যে সামরিক- বেসামরিক সম্পর্কের মধ্যে চাপ রয়েছে। সম্প্রতি গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ২০১৭ সালে উত্তর রাখাইন রাজ্যে আর্মির হামলায় রোহিঙ্গা গণহত্যা ঘটতে পারে বলে বিশ্বাস করে।

গণহত্যার অভিযোগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দু'জন সামরিক কর্মকর্তা অং সান সু চি'র আইনি প্রতিরক্ষা দলে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার বিভাগে যোগ দেবেন।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযানের কারণে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যায়।

রোহিঙ্গারা নাগরিকত্বের দাবি করছে তবে মিয়ানমার তাদের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, নাগরিকত্বের আবেদনগুলো ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে বিবেচিত হবে। মিয়ানমারের অনেক নাগরিক রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করে।

সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লেইং বলেন, ‘ঔপনিবেশিক আমলে ব্রিটিশরা বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক সস্তা শ্রমিককে মিয়ানমারে নিয়ে আসে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বা বাঙালি উভয়কেই নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি। ১৯৭৪-৭৫ সালে মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে দিলে গণমাধ্যম তাদেরকে রোহিঙ্গা নয়, বাঙালি বলে আখ্যায়িত করেছিল।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর