দু’হাত হারানো মালবিকার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

ভারত, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 19:13:38

গল্পটি তেরো বছর বয়সী এক কিশোরী মেয়ের। ঠিক সতেরো বছর আগে, সেদিনের কিশোরী মেয়েটির জিন্সের প্যান্ট ছিঁড়ে যায়, ছেঁড়া প্যান্ট গ্লু দিয়ে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করে সে। গ্লু বসানোর জন্য অনেকক্ষণ প্যান্টটা চেপে রাখতে হবে। কাজটি শেষ করার জন্য তার একটা কিছুর দরকার ছিল- যা দিয়ে প্যান্টটা চেপে ধরে রাখতে পারে। 

কিছু একটার খোঁজে মেয়েটি তাদের গ্যারেজে যায়। তাদের বাড়ির কাছাকাছি সৈনিকদের অস্ত্রাগার ছিল। সৈনিকদের পরীক্ষামূলক একটি গ্রেনেড তাদের গ্যারেজে এসে পড়েছিল। মেয়েটি না বুঝে গ্রেনেডটি কুড়িয়ে হাতে নেয়। গ্রেনেডটি প্যান্টের ওপর চেপে ধরতেই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। 

সেই বিস্ফোরণে কিশোরী মেয়েটি তার দুই হাত হারায়। শরীরের বিভিন্নস্থানে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার ঢুকে যাওয়ায় আজও যন্ত্রণায় ভুগতে হয় তাকে। ওই দুর্ঘটনা দেখে অনেকেই বিশ্বাস করতেন, তার স্বাভাবিক জীবন আর কখনই সম্ভব হবে না।

‘সতেরো বছর আগে যখন আমি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ছিলাম, তখন পাশ থেকে শুনছিলাম কয়েকজন নারী ফিসফিস করে বলছিলেন, সাধারণ ওয়ার্ডের আনা নতুন মেয়েটিকে দেখেছ? কী দুর্ভাগ্য! তার জীবন শেষ হয়ে গেছে’।

কথাগুলো ৩০ বছর বয়সী ভারতের তামিল নাড়ু প্রদেশের মালবিকা আইয়ারের। অসহ্য যন্ত্রণার এক অন্ধকার অধ্যায় পেরিয়ে মালবিকা আজ আলোর দিশারি। তিনি একজন মোটিভেশনাল স্পিকার, সোশ্যাল ওয়ার্কার, নারী শক্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং অসংখ্য মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম।

জনপ্রিয় এই মোটিভেশনাল স্পিকার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে ভারতের প্রেসিডেন্ট রাম নাথ কোবিন্দের কাছ থেকে সেরা মোটিভেশনাল স্পিকারের পুরস্কার গ্রহণ করেন।

জীবন সংগ্রামী এই নারীর গল্প থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন তাকে হুইলচেয়ারে ঠাঁই নিতে হয়েছিল। তবে একটা সময় পরিবারের চেষ্টায় আবারো দুই পায়ে দাঁড়ানো শেখেন তিনি। প্রস্থেটিক হ্যান্ড লাগিয়ে হাত দুটোর উড়ে যাওয়া অংশে যান্ত্রিক রূপ দেওয়া হলো। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি মালবিকা। শুরু করলেন লেখাপড়া। মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিলেন একজন লেখকের সহায়তায়। পরবর্তীতে মালবিকা রাজধানী দিল্লিতে আসেন, সেখানে সেন্ট স্টিফেন কলেজে অর্থনীতিতে স্নাতক করেন। সমাজকর্মের ওপর তিনি দিল্লি স্কুল থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। 

জীবনযুদ্ধে সফল এই সৈনিককে ভারতে রাষ্ট্রপতি ভবনে আমন্ত্রণ জানান রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম।

জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন মালবিকা আইয়ার। মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের জোরেই পৌঁছেছেন সাফল্যের চরম শিখরে। বর্তমানে একজন জনপ্রিয় মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে বিভিন্ন ওয়ার্কশপে বক্তব্য রাখেন। ডিজেবল মানুষকে নানাভাবে উৎসাহ প্রদান করেন। তাদের নতুন করে বাঁচার জন্য অনুপ্রেরণা দেন।

১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়। এই বছরের প্রতিপাদ্য ছিল, "প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ এবং তাদের নেতৃত্বের প্রচার: ২০৩০ ডেভলপমেন্ট এজেন্ডার উপর পদক্ষেপ নেওয়া" প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ক্ষমতার ওপর আলোকপাত করা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর