বিয়ের নামে চীনাদের কাছে ৬২৯ পাকিস্তানি নারী বিক্রি!

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-09 14:08:57

ছয় শতকেরও বেশি পাকিস্তানি নারীকে চীনা পুরুষদের কাছে কনে হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। পাকিস্তানের তদন্তকারীরা এমন ৬২৯ নারীর একটি তালিকা তৈরি করেছে। দু বছর ধরে চীনে এসব নারীদের পাচার করা হয়।

মানবপাচারকারী চক্রকে গুড়িয়ে দেওয়ায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফআইএ) তৈরি করেছে এ তালিকা। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এসোসিটেড প্রেসের এক প্রতিবেদনে এমনটি দাবি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্রি হওয়া নারীরা শারীরিক ও যৌন অত্যাচারের শিকার। পাচার হওয়া নারীদের অনেককে পতিতাবৃত্তির সঙ্গে জড়াতে বাধ্য করা হয়, কারো কারো দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও বিক্রি করে দেওয়া হয়।

চলতি বছরের মে মাসে এফআইএ বিয়ে দেওয়ার নামে চীনে নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন চীনা ও পাকিস্তানি নাগরিককে আটক করেছে। ওই সময় লাহোরে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নয়জন চীনা পুরুষ, এক নারীকে আটক করা হয়। তাদের চক্রের সঙ্গে জড়িত তিন স্থানীয়কেও আটক করা হয়, উদ্ধার করা হয় দুই কনেকে।
একই ধরনের অভিযানে পাচারকারীদের আটক করা হয় ফয়সালাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদ থেকে। মানবপাচারের শিকারদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের সদস্য।

পাকিস্তানি নারীদের বিয়ে দেওয়ার নামে যৌন নির্যাতন ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির সঙ্গে চীনারা জড়িত-এমন অভিযোগ ওঠার পরপরই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে এফআইএ। তবে, চীনা মানবপাচারকারী চক্রান্তের বিরুদ্ধে চাইলেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারছে না পাকিস্তানি তদন্ত সংস্থাটি।

মানবপাচারবিরোধী তদন্ত ও অভিযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের অনেকে বলেছেন, এমনটি হচ্ছে সরকারের ওপর থেকে চাপের কারণে। সরকারের ধারণা, চীনা নাগরিকদের ওপর কঠোর হলে বেইজিংয়ের সঙ্গে ইসলামাবাদের মধুর সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠতে পারে।

এই অবস্থায় চলতি বছরের অক্টোবরে মানবপাচারের সঙ্গে অভিযোগ ওঠা ৩১ জন চীনা নাগরিককে খালাস দেয় পাকিস্তানের ফয়সালাবাদের এক আদালত। অভিযুক্তদের বিপক্ষে সাক্ষীর অভাবে আদালত তাদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

ওই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত এক আদালত কর্মকর্তা ও তদন্তকারী পুলিশ জানায়, অনেক নারীই আদালতে সাক্ষী দিতে রাজি হয়নি, যদিও তারা এর আগে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছিলো। ভয় বা গোপনে অর্থ লেনদেনের কারণে তারা চুপ হয়ে গেছে।

এপি এক কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করে উদ্ধত করে, 'এসব মেয়ে বা নারীদের সহায়তা করতে কেউ এগিয়ে আসছে না। পুরো পাচারকারী চক্র তাদের কাজ করে যাচ্ছে আর নিজেদের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করছে। কর্তৃপক্ষ এটা নিয়ে গভীরভাবে ভাবছে না। প্রত্যেকেই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত না করার জন্য চাপ দিচ্ছে। এ কারণে মানবপাচার বন্ধ হচ্ছে না।'

কর্মকর্তাদের অভিযোগের সত্যতার ইঙ্গিত মেলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেসির মে মাসে করা এক মন্তব্যে। তিনি বলেছিলেন, 'আমাদের মেয়েদের রক্ষা করতে হবে, একই সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও রক্ষা করতে হবে।'

এদিকে মানবপাচার নিয়ে এপির প্রতিবেদনটি সত্য নয় বলে দাবি করেছে পাকিস্তানে চীনের দূতাবাস। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ বলেছে, 'চীন সরকার বৈধ বিয়ে রক্ষা ও অপরাধ দমনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কেউ যদি আন্ত-সীমান্ত বিয়ের নামে পাকিস্তানে অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে চীন সরকার পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে থাকবে। পাকিস্তানি আইন অনুযায়ী অপরাধীদের দমন করতে সহায়তা করবে চীন।'

চীনের নিজস্ব তদন্ত সংস্থার অনুসন্ধানে মিথ্যে বিয়ের অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করেছে চীনা দূতাবাস। দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্যে মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করে চীনা দূতাবাস বলেছে, 'এটা পরিষ্কার যে কিছু সংবাদমাধ্যম আবারও ভালোভাবে অনুসন্ধান ছাড়াই ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর উদ্দেশ্য খুবই সন্দেহজনক। আমরা কখনই গুটি কয়েক অপরাধীকে চীন ও পাকিস্তানের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে খারাপ করার সুযোগ দেবো না।'

মিথ্যা না ছড়িয়ে দু দেশের সম্পর্কের ইতিবাচক দিক তুলে ধরতে সংবাদমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীনা দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর