শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ, চলছে ধরপাকড়

ভারত, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-30 08:30:44

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বিতর্কিত এই নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আওয়াজ তোলা শুরু করেছে। এদিকে বিক্ষোভ শক্ত হাতে দমন করতে রাস্তায় নেমেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও। বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের পাশাপাশি কোথাও কোথাও তাজা গুলি ছুড়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অসংখ্য বিক্ষোভকারীদের আটকও করেছে দেশটির পুলিশ।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানী দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ ও অন্ধ্র প্রদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরে বিক্ষোভ করেছে। সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলা এই বিক্ষোভে কোথাও কোথাও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জনসম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।

নাগরিকত্ব আইন পাস হওয়ার পর এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে দিল্লিতে অবস্থিত জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বামপন্থি, প্রগতিশীল, উদারপন্থী ও মুসলিম সংগঠনের সদস্যসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। এ ঘটনায় শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠিচার্জ ও তাদেরকে লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে পুলিশ।

শিক্ষার্থীদের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনবিরোধী বিক্ষোভ

মুসলিমদের জন্য বিশেষায়িত এ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে পরদিন রোববার হাজার হাজার শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরের এলাকায় বিক্ষোভে নেমে যায়। এসময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। চলে ধর-পাকড়। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, এদিন জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় একশো শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে, রোববার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে একই সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।

জামিয়ার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার খবরে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোববার রাতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। জামিয়ার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সৌহার্দ্য প্রকাশে বিক্ষোভ করে উত্তরপ্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের বিক্ষোভ মিছিলটিও সহিংসতার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। সংঘর্ষে ৩০ শিক্ষার্থী ও ১০ পুলিশ আহত হয়।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে উত্তর প্রদেশের পুলিশ প্রধান জানান, ক্যাম্পাস খালি করা হবে, শিক্ষার্থীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হবে। ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে উত্তরপ্রদেশের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়েও।

হায়দ্রাবাদের মাওলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোববার মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছে। তারা নিজেদের পরীক্ষা স্থগিত করতে দাবি জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এদিন মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছেন। তারা ক্যাম্পাসের বাইরেও বিক্ষোভ মিছিলটি নিয়ে যান। নাগরিকত্ব আইনবিরোধী স্লোগানের পাশাপাশি জামিয়ার শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা জানান।

এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের তাদের পোশাক দেখে চিহ্নিত করা যাবে। তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

গত সপ্তাহে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে আইনটির বিরুদ্ধে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রথম বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। জামিয়ার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর তা ছড়িয়ে পড়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে।

উল্লেখ্য, ভারতের নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে প্রবেশকারী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের শরণার্থী বিবেচনা করে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এ আইনকে ভারতের ধর্মীয় নিরপেক্ষতার প্রতি আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেছে উদারপন্থী ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠন ও শিক্ষার্থীসমাজ। তবে, উত্তরপূর্বাঞ্চলে বিক্ষোভ চলছে 'অবৈধভাবে' প্রবেশকারী অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিবাদে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর