ইরানের অভিজাত সামরিক বাহিনীর প্রধান কাসিম সোলাইমানি মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহতের পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংকট ও অস্থিতিশীলতা শুরুর সংকেত দেখতে পাচ্ছে পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের নতুন করে উত্তেজনা শুরু নিয়ে উদ্বিগ্ন পাকিস্তানের সরকার। তবে, নিজেদের স্বার্থে মধ্যপ্রাচ্য সংকটে জড়াতে চায় না দেশটি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি সোমবার (৬ জানুয়ারি) পার্লামেন্টে এ কথা বলেন।
দেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে সরকারের অবস্থান অবগত করতে সোমবার পার্লামেন্টে বক্তব্য দেন মাহমুদ কোরেশি। নিজের বক্তব্যে তিনি বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে জানান, সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। এর পরিণতি ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা ও ২০১৯ সালে ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদিকে হত্যার চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে।
এরই মধ্যে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছাড়াও সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন মাহমুদ কোরেশি। তিনি জানান, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি আলোচনা করে পাকিস্তানের অবস্থান অবগত করেছেন এবং ইরানকে নিজের বিবেচনা প্রয়োগ করে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান করেছেন।
তবে, উত্তেজনা প্রশমন নিয়েও তেমন আশাবাদী নন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পার্লামেন্টে দেয়া বক্তব্যে মধ্যপ্রাচ্যে দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় বেশি প্রকাশ করেছেন তিনি।
মাহমুদ কোরেশি জানান, যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা উত্তেজনা কমানোর জন্য ‘নিরোধক’ হিসেবে হামলা চালিয়ে সোলাইমানিকে হত্যা করেছে। এ ঘটনার প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়েছে ইরান। তবে, যুক্তরাষ্ট্রও পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে সম্ভাব্য ইরানি প্রতিশোধের।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের আর পাঁচ শক্তির সঙ্গে করা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি না মানার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৮ সালের মে মাসে চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করলেও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন ও রাশিয়া এটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালায়।
এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা নতুন করে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত পাকিস্তান। মাহমুদ কোরেশি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি খুবই স্পর্শকাতর, যেকোনো সময় যেকোনো মোড় নিতে পারে এবং উদ্বেগের।
তার শঙ্কার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ইরাক ও সিরিয়ার অবস্থার চরম অবনতি হতে পারে, সংকটে নতুন মোড় আসায় আফগানিস্তানে চলমান শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে যেখান থেকে শুরু হয়েছে সেই অবস্থায় ফিরতে পারে, ইয়েমেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং সৌদি আরবের ওপর শিয়া হাউতিদের হামলা বাড়তে পারে। ইরানপন্থি বিভিন্ন গোষ্ঠী বিশেষ করে লেবাননভিত্তিক হেজবুল্লাহ ইসরায়েলে হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা পাকিস্তানের। সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধে শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা ও নাগরিকদের ওপর আত্মঘাতী হামলা হতে পারে বলেও ধারণা পাকিস্তানের।
পার্লামেন্টে এমন মন্তব্যের আগের দিন রোববারও (৫ জানুয়ারি) পাকিস্তান জানায়, তারা মধ্যপ্রাচ্যে সংকটে কোনো পক্ষ নেবে না।
উত্তেজনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সঙ্গে পাকিস্তানের মধ্যস্থতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি।