ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনের প্লেন ভূপাতিত হওয়াকে তিক্ত ট্রাজেডি হিসেবে আখ্যা করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) তেহরানের মোসাল্লা মসজিদে জুমার নামাজের খুতবা দেওয়া সময় এ কথা বলেন তিনি।
খুতবায় তিনি বলেন, মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত শীর্ষ কমান্ডারের ত্যাগের কোনো প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। প্লেন দুর্ঘটনাটি ছিল একটি ভয়াবহ ট্রাজেডি, যা আমাদের হৃদয়কে আঘাত করেছে। তবে কেউ কেউ সোলাইমানির আত্মত্যাগকে ভুলে যাওয়ার পথ হিসেবে এটিকে চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন। প্লেন দুর্ঘটনায় আমাদের শত্রুরা যেমন খুশি হয়েছিলো তেমনি আমরা দুঃখে রয়েছি। তারা আমাদের প্রশ্ন করার জন্য কিছু পেয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্পকে উদ্দেশ্যে করে খামেনি বলেন, মার্কিন ড্রোন হামলায় জেনারেল কাসিম সোলাইমানিকে হত্যা মার্কিন প্রশাসনের জন্য অপমানজনক এবং তারা তাদের জঙ্গিবাদের প্রকৃত রূপ দেখিয়েছেন। আর ট্রাম্প হলেন এমন এক ভাঁড় যিনি ইরানীদের সমর্থন দেওয়ার ভান করেছেন তবে একটি বিষাক্ত ছুরি তাদের পিঠেই চাপিয়ে দেবেন।
তিনি আরও বলেন, ঈশ্বর আমাদের সমর্থন করেন। ইরান যে অহংকারী শক্তির মুখ থাপ্পড় মারার ক্ষমতা রাখে তা প্রমাণ করেছে। প্লেন ঘাঁটিতে হামলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্য প্রাচ্য থেকে চলে যেতে বাধ্য করবে।
ইসরায়েলকে একটি ক্যান্সারের টিউমার হিসেবে আখ্যায়িত করেন ও কেউ ইসরায়েলের বিরোধিতা করলে তাকে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন খামেনি।
দীর্ঘ আট বছর পর জুমার নামাজের নেতৃত্ব দিলেন ইরানের প্রধান ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এসময় জুমার নামাজে হাজার হাজার লোক জড়ো হয় এবং তারা সোলাইমানির ছবি নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে ইরানের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি (৮০) তেহরানের মোসাল্লা মসজিদে জুমার নামাজের নেতৃত্ব দেবেন। এর আগে ২০১২ সালে ফেব্রুয়ারিতে ইরানের ৩৩তম বার্ষিকীতে মোসাল্লা মসজিদে জুমার নামাজের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন খামেনি।
এবিষয়ে ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউট ফর ইস্ট নিয়ার পলিসির মেহেদী খালাজি বলেছেন, ইরানের রাজধানীতে শুক্রবার জুমার নামাজের পর যে দোয়া হবে তা প্রতীকী অর্থে তাৎপর্যপূর্ণ। ইরানের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো বার্তা দিতে চায়, তখনই এ ধরনের দোয়া করেন।
প্রসঙ্গত, মার্কিন ড্রোন হামলায় কাসিম সোলাইমানি নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রতিশোধ নিতে মার্কিন প্লেন ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। পাল্টা হামলা প্রতিরক্ষা করতে ভুলবশত ইউক্রেনের যাত্রীবাহী প্লেন বিধ্বস্ত করে ইরান। প্রথমে হামলার দায় অস্বীকার করলেও পরে নিজেদের ভুল স্বীকার করে নেয় দেশটি। এতে নিহত হন ১৭৬ জন। যার মধ্যে ৮২ জন ইরানি, ৬৩ জন কানাডিয়ান, ১১ জন ইউক্রেনের, ১০ সুইডিশ, চার আফগান ও তিনজন জার্মানির নাগরিক ছিলেন বলে জানা গেছে। এরপর থেকেই ইরানে বিক্ষোভ চলে আসছে।