বর্তমান দিনে প্রায় সব চাষাবাদকৃত জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। যার ফলে দিন দিন উর্বরতা হারাচ্ছে ভূমি। এমনকি মারা যাচ্ছে হাজার হাজার কৃষি উপকারী পোকা ও কমে যাচ্ছে উৎপাদন।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত ভারতের রাজ্য সিকিমে রয়েছে ঠিক এর উল্টো অবস্থায়। রাজ্যটির প্রায় সব জায়গায় অর্গানিকভাবে শস্য উৎপাদন করা হয় ও কোনো জমিতেই রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। রাজ্যটির সকল জমিতেই ব্যবহার করা হয় জৈব সার।
২০০৩ সালে রাসায়নিক সার ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা করে দেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পাওয়ান কুমার ছামলিং। সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় রাসায়নিক সারের বিরুদ্ধে। আর যা ছিলো বিশ্বে প্রথম।
শুরুর দিকে এ ব্যবস্থায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সিকিমের প্রায় ৬৬ হাজার কৃষক জানায় তাদের ফসলের পরিমাণ কমে গিয়েছে। বেড়ে যায় সকল পণ্যের দাম। পরবর্তীতে কয়েকবছরে রাজ্য সরকার তাদের কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়। তাদের শেখানো হয়, কীভাবে জৈব সার ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া রাজ্য সরকার থেকে ভালো মানের জৈব বীজ বিতরণ করা হয় এবং কৃষকরা যাতে সরাসরি শস্য বিক্রি করতে পারে তারও ব্যবস্থাও করা হয়।
ধীরে ধীরে এর প্রসার বাড়তে থাকে এবং শস্য উৎপাদন বেড়ে যায়। জমির উর্বরতা ও আবহাওয়ায় আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় চাষি কারমা দিচেন বলেন, আমার চাল ও সবজির উৎপাদন আগের থেকে ৫ শতাংশ বেড়েছে।
২০১৬ সালে সিকিমের রাজ্য সরকার রাসায়নিক সার ব্যবহার করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে এবং কেউ তা ব্যবহার করলে একবছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়ার আইন তৈরি করে।
রাজ্যটির রয়েছে প্রায় ৭৫০ কিলোমিটারের মতো আবাদ ভূমি যা প্রায় নিউইয়র্কের সমান।
বর্তমানে রাজ্যটিতে সব খাদ্যশস্যে উৎপাদনে জৈব সার ব্যবহৃত হয়। যার ফলে ২০১৮ জাতিসংঘের পুরষ্কার পায় রাজ্যটি।
এছাড়া সেখানে প্ল্যাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজ্যটির প্রায় সকলেই কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করে।
এ বিষয়ে সিকিমের শহর গ্যাংটকের মেয়র বলেন, সবার সহযোগিতায় আমরা প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।
বনাঞ্চল বৃদ্ধি করার জন্য ২০১৩ সালের মধ্যে ৫ মিলিয়ন গাছ রোপণ করে রাজ্য সরকার। যার প্রেক্ষিতে অঞ্চলটিতে দর্শনার্থী বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।