কাজের সময় ‘বসার অধিকার’ পেল কেরালার নারী বিক্রয় কর্মীরা 

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 16:36:10

কেরালা রাজ্যের কোচির একটি টেক্সটাইল কারখানাতে বিক্রয় কর্মী হিসেবে কাজ করেন গীতা (ছদ্মনাম)। সেখানে তার দায়িত্ব গ্রাহকদের সম্ভাষণ জানানো। দুপুরের খাবার সময় ব্যতীত গীতার বসার কোন অনুমতি নেই। বসার জন্য তার কোন চেয়ারও নেই।

গীতা বলেন, ‘প্রায় সময় অস্থির লাগে। এমনকি ডিউটির সময় আপনি টয়লেটেও যেতে পারবেন না। দুপুরের খাবারের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট বরাদ্দ থাকে তারা শুধু সে সময়েই বসতে পারে। এরপর আবার বিকেল পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।’

৪৩ বছরের মায়া দেবী ২০ বছর ধরে কাপড় বিক্রির দোকানে বিক্রয় কর্মী হিসবে কাজ করেছেন। এই দীর্ঘ সময়ে কর্মক্ষেত্রে তিনি কখনো বসার সুযোগ পাননি। এমনকি কর্মক্ষেত্রে তার টয়লেট যাওয়ার অনুমতিও ছিল না।

তিনি বলেন, ‘দোকানে যখন কোনো ক্রেতা থাকতেন না তখনও আমাদের বসার অনুমতি ছিল না। এর অন্যথা হলে বেতন কেটে নেওয়া হত। সিসিটিভি দিয়ে নারীদেরকে মনিটর করা হয়।’

বছরের পর বছর ধরে ভারতের কেরালা রাজ্যে নারী বিক্রয় কর্মীদের এই যন্ত্রণা সহ্য করে কাজ করতে হচ্ছে। অবশেষে নারীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর সরকার তাদের অসুবিধার বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছেন।

কেরালার শ্রমীজীবী নারীরা এখন থেকে তাদের কাজের সময় বসার অনুমতি পাবে। কর্মস্থলে ‘বসার এবং টয়লেট ব্যবহারে পর্যাপ্ত সময়’যাতে নারী বিক্রয় কর্মীদের দিতে মালিকরা বাধ্য থাকে সে জন্য শ্রম আইন সংশোধন করেছে রাজ্য সরকার।

কর্মস্থলে নারী কর্মীদের ‘নিরাপদ পরিবেশ’নিশ্চিত করতে কেরালার মন্ত্রীসভা বিলটি পাস করতে ‘দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৬০’ সংশোধন করে।

আইন সংশোধনের বিষয়ে শ্রম অধিদপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘যেসব ঘটনা ঘটার কথা ছিল না সেগুলো ঘটছে। তাই নারী শ্রমিকদের জন্য আমরা আইন ঠিক করে দিয়েছি। কর্মক্ষেত্রে তাদের জন্য অবশ্যই বসার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং তাদের টয়লেট ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।’ আইন অমান্যকারী দোকান মালিকদের জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে বলেও জানান তিনি।

সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে নারী কর্মীরা। বিক্রয় কর্মী আজিথা (ছদ্মনাম) বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত অবশ্যই আমাদের মত কর্মীদের জন্য দারুণ স্বস্তিদায়ক। দীর্ঘদিন ধরে আমরা আমাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছি। কেননা উৎসব ও বিশেষ দিনগুলোতে নারী কর্মীদের দুর্দশা হয় ভয়াবহ। গ্রাহকদের ভীরে তখন দুপুরে খাওয়ার সময়টুকুও পাওয়া যায়।’

কেরালায় নারীদের সংগঠন ‘আসানঘাদিতা মেখালা টোজহিলালি ইউনিয়ন’ দীর্ঘ লড়াইয়ের পর এই অধিকার আদায় করেছে। ওই ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা ভিজি পানকুট (৪৮) ‘রাইট টু সিট’ নামে আন্দোলনটি গড়ে তোলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর