যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান শান্তি চুক্তি সই

মধ্যপ্রাচ্য, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 20:39:02

কাতারের দোহায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানদের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দোহার পাঁচ তারকা হোটেল শেরাটনে পাকিস্তান, কাতার, তুরস্ক, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তানের নেতাদের উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও  তালেবানদের মাঝে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জালময় খলিলজাদ ও তালেবানদের হয়ে সংগঠনটির রাজনৈতিক প্রধান মোল্লা আব্দুল গানি বারাদার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি হওয়ার মিনিট খানেক আগে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান সরকার একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে তারা জানায়, পরবর্তী ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর সমস্ত সেনা সদস্যকে ফেরত নেওয়া হবে।

বর্তমানে দেশটিতে ১৪ হাজার মার্কিন সেনা ও ৩৯টি দেশের জোটের ন্যাটো বাহিনীর ১৭ হাজার সেনা রয়েছে।

তালেবান-যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী ১৩৫ দিনের মধ্যে তাদের আট হাজার ৬০০ সেনা আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে নিবে ও অন্যান্য প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে।

এছাড়া চুক্তিতে আরও বলা হয়, চলতি বছরের ২৯ মে এর মধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে তালেবানদের অপসারণ করতে আফগানিস্তান কাজ করবে।

কাতারের দোহায় স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং তালেবান নেতারা অংশ নিয়েছেন। এছাড়া দোহায় আফগান সরকার ও তালেবানদের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

এই চুক্তির ফলে আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ বছরের যুদ্ধের অবসান হল।

এর আগে শনিবার সকাল থেকে শেরাটন হোটেলে ভিড় করতে শুরু করেছে আফগান, মার্কিন, ভারত ও পাকিস্তানের কূটনৈতিকগণ। এছাড়া জাতিসংঘের অন্যান্য সদস্যরা ও তালেবানদের ৩১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পাঁচ তারকা হোটেলটিতে একত্রিত হয়। আর চুক্তি নিয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি জানান, এটি আফগানিস্তানের জন্য একটি বিরাট সুযোগ। এটি কাজে লাগিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে দেশটি।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে প্লেন হামলা চালানো হয়। এর জন্য আল-কায়েদাকে দায়ী করে মার্কিন প্রশাসন। এরপরেই তাদের নির্মূল করতে আফগানিস্তানে সেনা পাঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

দীর্ঘ ১৮ বছরের এই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই হাজার ৪০০ সেনা মারা গেছে। মার্কিন জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে সেনা সদস্যদের ফেরত আনা ও রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধ শেষ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

২০১১ সাল থেকে আফগানিস্তানের শান্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য তালেবান নেতাদের হোস্ট করে আসছে কাতার। যার প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে কাতারে একটি অফিস খুলে তালেবানরা। তবে সেই বছরেই অফিসটি বন্ধ করে দেয় তারা। এরপর আবার ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তালেবানরা ঘোষণা দেয়, শান্তিতে যাওয়ার রোডম্যাপ তৈরিতে তারা মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানায় সংগঠনটি। তারা তখন আফগান সরকারকে মার্কিন পুতুল বলে আখ্যা করে।

কাতারে পরপর নয় দফা আলোচনা পর এই চুক্তিতে রাজি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানরা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ওয়াশিংটনের শীর্ষ আলোচক ঘোষণা দেয়, তালেবানদের সঙ্গে নীতিগত চুক্তির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ২০ সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ হাজার ৪০০ সৈন্য ফেরত নিবেন। তবে ঘোষণার একদিন পরেই আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য মারা যাওয়ার প্রেক্ষিতে চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই উভয় পক্ষ আবার আলোচনা শুরু করে।

আরও পড়ুন: মার্কিন-তালেবান চুক্তিতে ১৮ বছরের যুদ্ধের সমাপ্তি!

এ সম্পর্কিত আরও খবর