গরমে কি কমবে করোনার প্রাদুর্ভাব?

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 02:52:47

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে রয়েছে সারা বিশ্ব। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বাইরেও সারা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। তবে অনেকেই ধারণা করছেন— আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমবে।

তাহলে কেমন আবহাওয়ায় করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি মিলবে; গরমে কি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে নাকি তাপমাত্রা বাড়লে ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে পড়বে? এমন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আতঙ্কিত মানুষের মনে।

করোনাভাইরাস মোকাবিলা, সচেতনতা এবং এ ভাইরাসের ধরন সংক্রান্ত বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। প্রতিবেদনগুলোতে চিকিৎসক ও গবেষকরা নানান তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছেন। জার্মানি ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলেতে ভাইরাস বিশেষজ্ঞ থমাস পিটসম্যান কোভিড-১৯ ভাইরাসটির সঙ্গে আবহাওয়ার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেছেন। তার ব্যাখ্যাসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন তথ্য বার্তা২৪.কমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

গরমকালে করোনাভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ও সার্স-কোভি ২ ভাইরাসের মতো আচরণ করতে পারে। বসন্তের পর আস্তে আস্তে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে তখন করোনাভাইরাসেরও বিস্তার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। গ্রীষ্মের তাপমাত্রার সঙ্গে যেসব ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া বন্ধ হয় সেগুলো সাধারণত সংক্রমিত হয় শীতের শুরু থেকে।

থমাস পিটারসন বলেন, বসন্ত শেষ না হলে আমরা বলতে পারছি না করোনাভাইরাস সার্স ও ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো কিনা। কারণ, ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা এখনও এটা সম্পর্কে ভালো করে জানতে পারেন নি। আমরা জানি করোনাভাইরাস চীন থেকে ছড়িয়েছে, যা একটি প্রাণী থেকে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়েছে।

এই মুহূর্তে উত্তর গোলার্ধে করোনাভাইরাস বিস্তারের জন্য উৎকৃষ্ট আবহাওয়া বিরাজ করছে। শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস অর্থাৎ যা শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে— এসব ভাইরাস শীতল আবহাওয়ায় দীর্ঘদিন থাকে। ভাইরাসগুলো কম তাপমাত্রায় স্থিতিশীল, অনেকটা ফ্রিজে খাবার রাখার মতো।

এমন ভাইরাসের সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়ায় টিকে থাকা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। পিটসম্যান ব্যাখ্যা দিয়ে জানান, করোনাভাইরাস একটি লিপিড স্তর দ্বারা বেষ্টিত। এক কথায় বলা যায় চর্বিযুক্ত একটি স্তর। এই স্তরটি কঠিন কোনো আবরণ নয়, এজন্য তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তরটি ভেঙে যেতে পারে। অন্য ভাইরাস যেমন নোরোভাইরাস বেশি স্থিতিশীল হয়, এতে প্রোটিন এবং জিনগত উপাদান থাকে।

কিছু রোগ-জীবাণু আছে তাপমাত্রা বাড়লে নিচের দিকে নামতে থাকে। অন্যদিকে ডেঙ্গু ভাইরাস মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়।

পিটসম্যান বলেন, বায়ুর আর্দ্রতা শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। সাধারণত রোগ-জীবাণু হাঁচি দিলে বাতাসে ঝুলে থাকে। শীতকাল শুষ্ক দিন হওয়ায় আর্দ্রতায় রোগ-জীবাণু দীর্ঘ সময় বাতাসে ভাসতে থাকে। এ কারণে শীতে রোগ-জীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এসব ভাইরাসের লক্ষণ ছড়াতে বেশ কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে।

ভাইরাসজনিত রোগের লক্ষণগুলো হলো—জ্বর, ব্যথা ও কাশি। এ রোগের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নির্ভর করে রোগীর বয়স ও লিঙ্গের ওপর। বিশেষ করে করোনাভাইরাসে পুরুষের মৃত্যু হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ, নারীদের ১ দশমিক ৭ শতাংশ।

পিটসম্যানের মতে, এই পার্থক্যটি জিনগত। কিছু প্রতিরোধ-প্রাসঙ্গিক জিন, প্যাথোজেনগুলো শনাক্ত করার জন্য দায়ী এক্স ক্রোমোজোম। কারণ, মহিলাদের দুটি এক্স ক্রোমোজোম রয়েছে এবং পুরুষদের একটি মাত্র আছে, এখানে নারীদের সুবিধা।

পিটসম্যানের মতে, উত্তর গোলার্ধে বসন্তেই করোনাভাইরাস সম্ভবত শেষ হয়ে যাবে। তবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মতে শীত না এলেও দক্ষিণ গোলার্ধে অস্ট্রেলিয়ায় ২০টিরও বেশি এবং ব্রাজিলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের একটি ঘটনা রয়েছে।

এদিকে স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, এপ্রিলে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করোনাভাইরাস চলে যাবে। তার মতে, বিভিন্ন তত্ত্ব ও অতীতের ইতিহাস বলে, গরম ভাইরাসকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।

বিশেষজ্ঞরা তার এই ধারণা মানতে পারছেন না। কারণ, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে সারা বছর গরম থাকলেও সেখানেও করোনভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। তবে তীব্রতা কম ছিল, এমনকি দ্রুত সুস্থও হয়েছেন। এছাড়া চীনের প্রতিবেশী ভারতসহ ১৪টি দেশ বেশিভাগই গরম প্রধান। আর এসব দেশে করোনাভাইরাস তেমন বড় আকার ধারণ করেনি। তবে সবকিছুর পর বিশেষজ্ঞদের মতে, আবহাওয়ার দ্বারা ভাইরাস প্রভাবিত হয় না, কারণ এর আগে সার্স ভাইরাস ২০০৩ সালের জুলাই পযর্ন্ত স্থায়ী ছিল।

ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাস আবহাওয়ার দ্বারা কতটা প্রভাবিত হবে তার জন্য গ্রীষ্মের অপেক্ষা করতে হবে। ততদিন এ ভাইরাস সম্পর্কে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।  

এখন পর্যন্ত চীনসহ ৭৭টি দেশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩০৯০ জন। এদের মধ্যে চীনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৮০৪২২ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩ হাজার ২৮৫ জন।   

এ সম্পর্কিত আরও খবর