মহারাজা এক্সপ্রেস: ভারতের সবচেয়ে বিলাসবহুল ট্রেনে ভ্রমণ

ভারত, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 09:10:13

ভারতের ‘প্যালেস অন হুইলস’ ট্রেনের কথা সবাই জানেন। দেশটির বিলাসবহুল ট্রেনযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছিল ‘প্যালেস অন হুইলস’ উদ্বোধনের পর। কিন্তু জানেন কি ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং এবং ট্যুরিজম কর্পোরেশন আরও একটি ট্রেন তৈরি করেছে, যা বিলাসিতা ও আভিজাত্যে পিছনে ফেলে দিতে পারে পৃথিবীর অন্যান্য প্রথম সারির বিলাসবহুল ট্রেনকে। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে বর্তমানে ভারতের সব থেকে বেশি বিলাস বহুল, ব্যয়বহুল ও আরামদায়ক ট্রেন মহারাজা এক্সপ্রেসের।

ভারতীয় রেলওয়েজ এবং রাজস্থান ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন যখন ‘প্যালেস অন উইলস’ এর উদ্বোধন করে, তখন বিলাস এবং বৈভবের দিক থেকে এর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো আর কোনও ট্রেন ভারতে ছিল না। এমনকি ২০১০ সালে পৃথিবীর চতুর্থ বিলাসবহুল ট্রেন হিসেবে নির্বাচিত হয় এই ট্রেনটি। তবে বর্তমানে করা একটি সমীক্ষা বলছে, প্যালেস অন উইলস-এর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে মহারাজা এক্সপ্রেস। শুধু ভারতেই নয়, এশিয়ার অন্যতম ব্যায়বহুল ট্রেন এখন মহারাজা এক্সপ্রেস।

বিভিন্ন প্যাকেজ অনুসারে ট্রেনটিতে বিভিন্ন রেঞ্জের ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। সর্বোচ্চ ভাড়া ২৬ হাজার ডলার।  সব খাওয়া এবং ড্রিঙ্কংস এই ভাড়ার মধ্যেই। ২৩টি বগির এই ট্রেনে ৮৮ যাত্রী সফর করতে পারবেন। ভারতের উত্তরাঞ্চলের রাজস্থান রাজ্যের রাজা মাহারাজাদের ভূমি এখন বিখ্যাত ‘মহারাজা এক্সপ্রেস’ এর কারণে। দর্শনার্থীদের জন্য দারুণ আকর্ষণ এই ট্রেনে ভ্রমণ। ‘হেরিটেজ অব ইন্ডিয়া’ প্যাকেজে ৭দিন ৬ রাতের দীর্ঘ ভ্রমণ শুরু হয় মুম্বেই স্টেশন থেকে। এরপর একেকদিন একেক শহড়ে গিয়ে থামে ট্রেনটি। উদয়পুর, যোধপুর, বিকানোর, জয়পুর, র‌্যানথম্বোরপুর এন্ড ফতেপুর সিক্রি ও সবশেষে আগ্রা।

মুম্বাই থেকে রাজস্থানের এই দীর্ঘ যাত্রায় আপনি দেখতে পাবেন বিখ্যাত সব প্রাচীন দুর্গ, প্যালেস, মার্বেল নির্মিত সৌধের জন্য। জয়পুর থেকে ঝোধপুর পর্যন্ত দীর্ঘ যাত্রায় বিশাল বিশাল প্রাসাদ, মরুভূমির বিশালতায় চোখ জুরিয়ে যায় পর্যটকদের। দর্শনাথীদের বারবার ব্যাগ গোছানোর কোন চাপ নেই। শুধু নতুন নতুন স্টেশনে পৌঁছানো আর জায়গাগুলো আবিস্কার করা। বাকী সব দায়িত্ব দেখভাল করে ট্রেনের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা।

মহারাজা ট্রেনের ভেতরে ভীর-ভাট্টার বালাই নেই ট্রেনের ভেতরে। চারদিকের দেওয়ালগুলো অভিজাত, ঐহিত্যবাহী নকশা করা। ট্রেনে প্রতি চারজন অতিথির সেবায় তিনজন কর্মচারী নিয়োজিত থাকে। ট্রেনের পরিষেবার অংশ হিসেবে অতিথিদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী নন্দনতত্ত্বের নানা উপকরণ। রাজস্থানের রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আট দিনের যাত্রায় মনে হবে আপনি যেন রাজপারিবারেরই কেউ।

ট্রেনে অতিথিদের থাকার জন্য তৈরী কেবিনগুলো ১১২ স্কয়ার ফিটের, আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা সেখানে নিশ্চিত করা আছে। প্রেসিডেন্টিয়াল স্যুটে দুটো বেডরুম, ব্যক্তিগত লিভিং এরিয়া, বাথটাব, রাজকীয় সাজসজ্জা সবকিছুই আছে। থাকার ঘরের ডাইনিং, বার, লাউঞ্জ, জেনারেটর এবং স্টোর কারের পাশাপাশি ব্যবস্থা আছে । প্রতিটি কেবিনে রয়েছে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা, এলসিডি টিভি, ডিভিডি প্লেয়ার, টেলিফোন, লাইভ টিভি, ইন্টারনেট কানেকশন এবং সেফ-ডিপোজিট বক্স।

মহারাজা এক্সপ্রেসে খাওয়া-দাওয়ার যে আয়োজন আছে, তার নামের সঙ্গে একদম মানানসই বলা যায়। ‘ময়ূরমহল’ এবং ‘রঙমহল’ নামে ভারতের স্থানীয় সব খাবারের আয়োজন নিয়ে আছে দুটি রেস্টুরেন্ট। ৪২ জন অতিথি একসঙ্গে খাবার খেতে পারেন সেখানে।

ব্রিটিশ দর্শনার্থী জোয়ানা নিউম্যান বলেন, ‘ভারত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের আমি অবশ্যই এই ট্রেনে ভ্রমনের জন্য পরামর্শ দেব কেননা এতে চড়লে ভারতের অনেক জায়গা খুব সহজে দেখা সম্ভব। এই ট্রেনভ্রমণে মনে হয়ছে যেন আমি এই ট্রেনের একটা অংশ, এতটা আরামদায়ক ছিল।’

‘তোমাকে উড়তে হবে না, চালাতে হবে না, কিন্তু প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবে নতুন একটা জায়গায় পৌঁছে গেছো’ যোগ করেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর