বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। প্রতিদিনই বাড়ছে প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনে এর প্রাদুর্ভাব কমে গেলেও দ্রুত গতিতে বাড়ছে অন্যান্য দেশগুলোতে।
বুধবার (১৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৪১৮ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৬৩। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮২ হাজার ২২৬ জন। মৃত্যুর হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সুস্থ হওয়ার হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ।
গত ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে ভাইরাসটি সর্বপ্রথম শনাক্ত হয় চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে। বর্তমানে দেশটিতে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা একদমই নিচে। ইতিমধ্যেই চীনের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা স্বাস্থ্য কর্মীদের আনুষ্ঠিকভাবে উহান থেকে বিদায় নিতে শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় প্রাণহানি হয়েছে মোট ৩ হাজার ২২৬ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৭ জন মানুষ।
চীনে করোনার ভয়াবহতা শেষ হলেও বাড়ছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা দেশটির নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার বরাত দিয়ে জানায় ইতালিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৫০৬ জনে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ৫০৩।
বর্তমানে দেশটি লকডাউন অবস্থায় আছে। সকল শিক্ষা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, যান চলাচলসহ সব কিছু বন্ধ রাখা হয়েছে। খোলা রয়েছে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও ফার্মেসি। এছাড়াও লকডাউন অমান্য করে করে বের হলে জরিমানা করা হচ্ছে। এর আগেই করোনার প্রভাব ঠেকাতে সরকার জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়াও ফুটবল ম্যাচসহ সব ধরনের স্পোর্টস ইভেন্ট স্থগিত করা হয়েছে।
করোনার থাবায় ব্যাপক নাজুক অবস্থানে আছে ইরান। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৯৮৮ জনের। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৬, ১৬৯।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা ১০৯ এ দাড়ালো। আর আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৪৫৬ জন। এছাড়া দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে নতুন করে আরও ছয়জন মারা গেছে। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায়ও প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা গেছে।
স্পেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ৮২৬ জন। মারা গেছেন ৫৩৩ জন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০, এর মধ্যে মারা গেছেন ৬ জন। করোনার বিস্তার রোধে অস্ট্রেলিয়া জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। বুধবার (১৮ মার্চ) দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এই ঘোষণা দেন। মানব সুরক্ষায় জরুরি অবস্থার জারি করা হয়। এছাড়া তিনি দেশটির সমস্ত নাগরিকদের বিদেশ ভ্রমণে না যেতে পরামর্শ দিয়েছেন।
ইউরোপ আমেরিকা ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও করোনার থাবা পড়েছে। বাংলাদেশ ১০ জন করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ভারতে ১৪৭ জনের সংক্রমণ এবং তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছে। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) নতুন করোনভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য প্রথমে ৪ জন সুস্থ মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। সে সাথে চীনেও করোনা-১৯ ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চেন উই'র নেতৃত্বে একটি গবেষক দল এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষার অনুমোদন পান।
এদিকে ভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে ইউরোপ সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির ইউরোপের অঞ্চলিক পরিচালক জানান, ডব্লিউএইচও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরি পরিস্থিতিতে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এইচআইভি, যক্ষ্মার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো সরবরাহের ওপর জোর দিচ্ছে। কিন্তু খুব দ্রুতই ওষুধ সরবরাহ সংকটের মুখে পড়তে পারে ইউরোপ।