দুই বিশ্বযুদ্ধ ও স্প্যানিশ ফ্লু'র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জীবন অতিক্রম করা এক বয়োবৃদ্ধা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন।
শনিবার (২৮ মার্চ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ১০৮ বছর বয়সী হিলডা চার্চিল। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ম্যানচেস্টারের সালফোর্ডের কেনিয়ন লজ কেয়ার হোমে স্ব-বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিলেন তিনি।
মারা যাওয়ার তিন-চার দিন আগে থেকে তার শরীরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সামান্য লক্ষণ দেখা দেয়। শনিবার সকালে কোভিড-১৯ টেস্টে ইতিবাচক শনাক্ত হওয়ার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে মারা যান হিলডা।
পরিবারের সদস্যরা আগামী ৫ এপ্রিল হিলডার ১০৯তম জন্মদিন উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তার নাতি অ্যান্টনি দাদিকে চমকে দিতে জন্মদিনে উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিলেন।
অ্যান্টনি বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়টি হলো—জীবনের শেষ সময়ে তার পাশে থাকতে পারিনি আমরা। অথচ তিনি সারাজীবন আমাদের সঙ্গে ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, এটা আমাদের জন্য হৃদয়বিদারক। তার জন্মদিনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি ছিল, সেটা নিয়ে আমরা সবাই খুব উচ্ছ্বসিত ছিলাম।
অ্যান্টনি কাতর কণ্ঠে বলে, দাদি বলতেন—তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন না, তবুও আমার প্রায়শই মনে হতো তিনি বেঁচে থাকবেন। জীবনের শেষ সপ্তাহে তার সঙ্গে থাকতে না পেরে আমি ব্যথিত!
‘আমি মনে করি আমাদের সবার আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত। তিনি (হিলডা চার্চিল) একজন যোদ্ধা ছিলেন, তিনি সুস্থও ছিলেন, কেবল সামান্য লক্ষণ দেখা গিয়েছিল’, যোগ করেন অ্যান্টনি।
দাদি হিলডার জীবনযাপন প্রসঙ্গে অ্যান্টনি বলেন, হিলডা কখনো মদ্যপান বা ধূমপান করতেন না, তিনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। দশ মাস আগে কেয়ার হোমে যাওয়ার আগেও তিনি বাগান পরিচর্যা করতেন, একাই থাকতেন।
বৃ্দ্ধ বয়সেও হিলডার মুখের হাসি লেগেই থাকতো। দাদিকে নিয়ে পত্রিকায় লেখা প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন জানিয়ে অ্যান্টনি বলেন, আমি চেয়েছিলাম প্রত্যেকে জানুক হিলডা কেমন দুর্দান্ত নারী; মহান মা-স্ত্রী-দাদী এবং নীতিবান ব্যক্তি। এখন যেভাবে খবর এলো, এভাবে আসুক আমি চাইনি।
১৯১১ সালে যুক্তরাজ্যের ক্রেওয়ে জন্মগ্রহণ করেন হিলডা চার্চিল। অর্থনৈতিক মন্দা চলাকালে স্বামীর সঙ্গে কাজের সন্ধানে সালফোর্ডে চলে আসেন তিনি।
দাদিকে স্মৃতিচারণ করে অ্যান্টনি বলেন, তিনি আমাদের পরিবারের রানী ছিলেন; তার মৃত্যুতে আমরা সবাই শূন্য হয়ে গেছি!
চার সন্তানের জননী হিলডা চার্চিল ১১ নাতি-নাতনি ও ১৪ জন প্রৌপুত্র-প্রৌপুত্রী রেখে গেছেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দাদিকে হারানো অ্যান্টনি সবাইকে ভাইরাসটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমার পরিচিতদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একমাত্র ব্যক্তি আমার দাদি। পরিচিত কেউ আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত অনেকেই বাস্তবতা বুঝতে পারেন না। আর যখন তা ঘটে তখন আমাদের হৃদয় ভেঙে যায়।
অ্যান্টনি বলেন, আমাদের সবার একে অপরের প্রতি যত্নবান হওয়ার উচিত। আপনি জানেন না কখন আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে চোখের পলকে কেড়ে নেবে!