চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হয়। শহরটিতে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় আড়াইমাস পর বুধবার ( ৮ এপ্রিল) উহান থেকে লকডাউন তুলে নিয়েছে চীন সরকার। আবারও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা শুরু করেছে উহানের বাসিন্দারা।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরুতে উহান কর্তৃপক্ষ ভাইরাসে আক্রান্তের তথ্য গোপন করেছিল। এর প্রভাবে চরম মূল্য দিতে হয়েছে হুবেই প্রদেশের এ রাজধানীকে। করোনায় চীনে ৩ হাজার ৩০০ এর বেশি মানুষ মারা গেছেন। প্রায় ৮২ হাজার কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে বেশিরভাগই রাজধানী উহানসহ হুবেই প্রদেশের।
এজন্য লকডাউন শেষে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা উহানবাসী, তাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্ববাসীকে। প্রায় আড়াই মাসের লকডাউনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন কেউ কেউ।
বুধবার (৮ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসিতে এক ভিডিও বার্তায় দীর্ঘ লকডাউন জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন উহানের কয়েকজন বাসিন্দা।
এক নারী বলেন, আমি আশা করি, মানুষ উহানের ভুল থেকে শিখবে। তাহলে অন্যদের এতটা আত্মত্যাগ করতে হবে না। অন্যরা কেউ এত বড় ভুল করেনি। আমরা সবাই ভালো থাকব, যখন বিশ্ব এই মহামারি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।
অপর এক নারী বলেন, আমি যদি পিছনের দিনগুলোর দিকে ফিরে তাকাই; এটা আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। সেই স্মৃতিগুলো ভয়ঙ্কর।
প্রথমদিকে উহানবাসী করোনা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না। লকডাউনের শুরুতে সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন তারা। পরবর্তীতে জনগণের সহযোগিতা, চীন সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রচেষ্টায় কোভিড-১৯ মহামারি রোধে সফল হয় উহান। এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) উহানে নতুন রোগী শনাক্ত হয় ৩২ জন, যা গত ৩৯ দিনের মধ্যে সবচেয়ে কম।
উহানের একজন নারী বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে উহান সিটি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। জনগণ ঘরে থেকে প্রশাসনকে সাহায্য করেছে।
উহানের এক বাসিন্দা বলেন, দীর্ঘ সময় উহান লকডাউনে ছিল। প্রথম দিকে আমি বিষয়টিকে পাত্তা দেইনি। ভেবেছিলাম তেমন কিছু হবে না। কিন্তু কিছু দিন পরেই জিনিসপত্রের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিল। খুব ভয় পেয়েছিলাম এবং রাতে ঘুমাতে পারতাম না।
লকডাউনের পুরো সময়টা খুব সংকটে ছিলেন জানিয়ে উহানের বাসিন্দারা জানান, অবরুদ্ধ সময়ে অনলাইনে দেখেছি কিভাবে চিকিৎসকরা মেডিকেল সরঞ্জামের জন্য আবেদন করেছেন। রোগীরা জানিয়েছেন বেড নেই। আস্তে আস্তে খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ শুরু হয়। চিকিৎসা সরঞ্জামও আসতে থাকে।
এক নারী জানান, তারা প্রতিবেশিদের মধ্যে গ্রুপ করে খাবার সংগ্রহ করত। বেশির ভাগ সময় মাংস খাওয়া হত।
এক নারী জানান, এটা কঠিন সময় ছিল। ঘরবন্দী থাকার সময় খুব হতাশায় ভুগতাম। আমার বয়ফ্রেন্ড বেশ সহযোগিতা করেছে। ঘরে বসে ভালোবাসা দিবস পালন করেছি। এই মহামারিতে জন্মদিন পড়েছিল, ও কৌশলে কেক ম্যানেজ করেছে।
মুসলিম এক নারী জানান, আমার পরিবার ইসলাম ধর্মের অনুসারী। এ সময়, হালাল খাবার পাওয়া আমাদের জন্য কঠিন ছিল।
কেউ কেউ দীর্ঘ সময় স্বামী-স্ত্রীর এক সঙ্গে থাকার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। এই সময়টাতে পারিবারিক কলহে না জড়িয়ে একে অপরকে সহযোগিতা করারও পরামর্শ দেন।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুসারে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ লাখ ৯৫ হাজার ৫১ জন, মৃত্যু হয়েছে ৮৭ হাজার ৪৬৯ জন মানুষের। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো যখন করোনাভাইরাসের প্রকোপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন চীন এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসছে।