মহামারি করোনাভাইরাসে গোটা বিশ্বের প্রায় ১৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১ লাখ মানুষের বেশি। তবে এই ভাইরাসের কড়ালগ্রাসে পড়েছে ইউরোপের প্রথম সারির দেশগুলো। মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি এই অঞ্চলের। ইউরোপে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ ১৭ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত। বিশ্বে মারা যাওয়ার সংখ্যার হিসেবে প্রায় ৭০ ভাগ ইউরোপের।
আশার কথা হচ্ছে, এশিয়া অঞ্চলে সংখ্যার হিসেবে উন্নতির চিত্রই প্রকাশ পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ নানা সিদ্ধান্তের কারণে ইউরোপ থেকে এশিয়ায় করোনার প্রাদুর্ভাব অনেকটা কম। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, তাইওয়ান, শ্রীলঙ্কাসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ করোনা মোকাবিলায় ইতিমধ্যে সফলতাও দেখিয়েছে।
এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দেশ চীনের উহান শহর থেকে এই ভাইরাসটির উৎপত্তি। দেশটির প্রায় ৮১ হাজার মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। সেখান থেকেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে কোভিড-১৯।
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি সামলাতে যেখানে ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে এশিয়ায় শুক্রবারের (১০ এপ্রিল) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫৬৪ জন। যার মধ্যে চীনের ৮১ হাজার অন্তর্ভুক্ত।
সেই হিসেবে এশিয়া অঞ্চলে চীন বাদে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র মাত্র ১ লাখ ৯২ হাজার ৬৫৭ জন। এদের মধ্যে ইরানেই আক্রান্তের সংখ্যাই ৬৪ হাজার ১৯২ জন। এছাড়া তুর্কিতে আক্রান্ত ৪৭ হাজার ২৯ জন।
সুস্থ হওয়ার দিক থেকেও আশার আলো দেখাচ্ছে এশিয়া। আক্রান্ত হওয়া ২ লাখ ৭৪ হাজারের মধ্যে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। যার মধ্যে ৭৭ হাজার ৪৫৫ জনই চীনের নাগরিক।
ইরানের সুস্থতার হারও বেশ ঊর্ধ্বগামী। ৬৮ হাজারের মাঝে ইতোমধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার ৪৬৫ সুস্থ হয়েছেন। যা সংখ্যার বিচারে ৫০ ভাগের বেশি। চীনের পর এশিয়ার মধ্যে ইরানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
এদিকে, ইউরোপের চারটি দেশে যেখানে লাখের ওপর আক্রান্তের সংখ্যা রয়েছে সেখানে এশিয়ার কোনো দেশ সেই সংখ্যার আশপাশে নেই। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার হলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। সে হিসেবে চীনকে আপাতত তালিকা থেকে বাদ দেওয়াই যায়।
গত ২৪ ঘণ্টার হিসেবেও এশিয়ার চিত্র ইউরোপ থেকে অনেকটা উন্নতি করেছে। গত একদিনে ইউরোপে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৮৪৬ জন। মারা গেছেন ৪ হাজার ১২৬ জন। অন্যদিকে, এশিয়াতে আক্রান্তের সংখ্যা গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার ৬৬৭ জন। মারা গেছেন মাত্র ৩২৫ জন।
সব মিলিয়ে, ইউরোপে এখন পর্যন্ত ৮ লাখ ২৮ হাজার ৬৬৬ আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন দুই লাখ ১ হাজার ৬২৭ জন। বাকিদের মধ্যে ৫ লাখ ৫৬ হাজার ২৯১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যদিকে, এশিয়াতে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৬৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।
মার্চের ২১ তারিখ বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে উল্লেখ করা হয় এশিয়ার কিছু দেশ খুব দ্রুত এই ভাইরাস নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক রিসার্চ পলিসির ডিরেক্টর টিক্কি প্যানজাস্টা বিবিসিকে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের সুযোগ নষ্ট করে। চীনে প্রথম আক্রান্তের পর তাদের হাতে প্রায় দুই মাস সময় ছিল।
তিনি আরও বলেন, তাদের ধারণা ছিল চীন তাদের থেকে অনেক দূরে। এই ভাইরাস এখানে সংক্রমিত হবে না।
তিনি বিবিসিকে বলেন, প্রথম আক্রান্তের সময় ধারণা করা হয়েছিল এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। তারপরও মাত্র তিনদিনের মাথায় সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও হংকং তাদের বর্ডারগুলোতে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল।
এই বিশেষজ্ঞের আলোকে দেশ তিনটির বর্তমান চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, সিঙ্গাপুরে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ১০৮ জন। যাদের মধ্যে মারা গেছে মাত্র ৭জন। হংকংয়ে ১ হাজার জন আক্রান্ত হলেও মারা গেছেন মাত্র ৪ জন। তাইওয়ান সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে এই দুই দেশ থেকে। দেশটিতে ৩৮৫ জন আক্রান্তের বিপরীতে মাত্র ৬ জন মারা গেছে।
এছাড়া, দি জাপান নিউজ নামের একটি পত্রিকা মার্চের ১৩ তারিখ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে উল্লেখ করা এশিয়ার বিভিন্ন দেশের এই ধরনের মহামারি রোগ সম্পর্কে কিছু ধারণা রয়েছে। এ বিষয়ে কিংস কলেজের অধ্যক্ষ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি প্রধান কেনজি সিবায়া তাদেরকে বলেন, কোভিড ১৯ এর আগে তারা এই ধরনের ভাইরাস নিয়ে আগেও কাজ করেছে। ২০০৩ সালে এশিয়াতে সার্স আঘাত করে। এরপর মার্স ও সোয়াইন ফ্লু আসে। এইগুলোই তাদের অভিজ্ঞ করে তুলেছে অন্যান্য দেশগুলোর থেকে।